ছবিটি ফটিকছড়ির পাইন্দংয়ের ফেলাগাজী থেকে তোলা
২৩ ডিসেম্বর-কৃষি প্রধান এ দেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাঙ্গল-জোয়াল। বাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য নাঙ্গল-জোয়ালের মাধ্যমে এক সময় করা হত হালচাষ। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তির এ সময়ে হারিয়ে গেছে কৃষি কাজের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার নাঙ্গল-জোয়াল আর বলদ গরু।
সভ্যতার ক্রমবিকাশের হাত ধরে যান্ত্রিকতা নির্ভর কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় অনেকখানিই উপেক্ষিত ঐতিহ্যের নাঙ্গল-জোয়াল আর হালের গরুর ব্যবহার। সারা দেশের ন্যায় ফটিকছড়ির চিত্রও অভিন্ন। একসময় ফটিকছড়ির কৃষি উর্বর এই জনপদের মানুষদের ঘুম ভাঙতো নাঙ্গল-জোয়াল আর হালের গরুর মুখ দেখে। যন্ত্রপ্রকৌশলের আধিপত্যে এখন সেই জনপদের মানুষদের ঘুম ভাঙে হালচাষ যন্ত্র ‘ট্রাক্টর’ এর শব্দে।
তবে, গ্রামের অনেক কৃষক জমি চাষের জন্য গরু দিয়ে হালচাষের সনাতনী পদ্ধতি এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। কিন্তু যান্ত্রিকতার দাপটে ঐতিহ্যের এসব কৃষি উপকরণ কতদিন টিকে থাকে ভবিষ্যতই তা বলে দেবে। রোসাংগিরীর কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জনকন্ঠকে বলেন, আগে কৃষক বলদ গরু পালন করতেন শুধু হালচাষ করার জন্য। প্রাকৃতিক ঘ্রাস আর ভাতের মাড়-খৈলের ভুঁসি ইত্যাদি খাইয়ে হৃষ্টপুষ্ট করে তোলা হালের জোড়া বলদ দিয়ে বিঘার পর বিঘা জমি চষে বেড়াতেন কৃষক। হালচাষের জন্য ‘প্রশিক্ষিত’ জোড়া বলদের মালিককে সিরিয়াল দিতে হতো জমি চষে দেওয়ার জন্য। চাষের মৌসুমে তাদের উপরি আয়ের ব্যবস্থা হতো।
আজিমনগরের কৃষক বৃদ্ধ আব্দুল হালিম বলেন, জীবনের সিংহভাগ সময় কেটেছে নাঙ্গল-জোয়াল আর গরুর পালের সঙ্গে। বাড়িতে হালচাষের বলদ গরু ছিল এক জোড়া। এক জোড়া বলদ, কাঠ-লোহার তৈরি নাঙ্গল, জোয়াল, চঙ্গ (মই), নড়ি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানো লাঠি), গরুর মুখের টোনা এই লাগতো আমাদের। এখন তো সব বিলুপ্ত।
কৃষক আব্দুর রহমান গরু দিয়ে হালচাষের উপকারিতা বর্ণনা করে বলেন, ‘গরু দিয়ে হালচাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো, হালচাষ করা হতো অনেক সময় গরুর গোবর সেই জমিতেই পড়তো। এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো এই জন্য ফসল ভালো হতো। পর্যাপ্ত গভীর পর্যন্ত খুঁড়া হতো। ধীরে ধীরে পাওয়ার টিলারের প্রচলন হওয়ায় গরু দিয়ে হালচাষের কদর কমে গেছে।
আশিকুর রহমান