তাড়াশে উর্বর ফসলি জমিতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইটভাঁটি। কৃষি ও পরিবেশের নানামাত্রিক ক্ষতির পরও বহাল তবিয়তে এসব ভাটার মালিকরা তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর বছরে দুএকবার অভিযান চালিয়ে কোনো কোনো ইটভাঁটি আংশিক ভেঙ্গে ও আর্থিক জরিমানা করলেও, অদৃশ্য কারণে তারা আবারও তাদের কাজ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ খুঁটির জোর কোথায়? এলাকার সাধারণ মানুষ এমন প্রশ্ন তুলেছেন।
তবে ভাটার মালিকগণ বলছেন, তারা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছেন। এ ছাড়াও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে লাইসেন্সের জন্যও আবেদন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক দশক ধরে এসব ইটভাঁটির মালিকরা একই ধরনের বয়ান দিয়ে অবৈধভাবে ইট তৈরি করলেও একটি অসমর্থিত সূত্র বলছে, এলআর ফান্ডই তাদের অবৈধ ইটভাঁটি পরিচালনার মূলশক্তি। মাঝে মাঝে অভিযান লোক দেখানো। তা না হলে বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাঁটি চলছে কীভাবে?
সূত্র বলছে, চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার তিন ইউনিয়নে মোট সাতটি ইটভাঁটি রয়েছে। এরমধ্যে সাদিয়া ও এমএমবি পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র থাকলেও দুই বছর ধরে তা নবায়ন করা হয়নি। অন্যগুলোর কোনো প্রকার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। সাতটি ভাঁটির কোনোটির জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সও নেই। অর্থাৎ সাতটি ইটভাঁটিতে এখন অবৈধভাবে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সদ্য বদলিকৃত সহকারী পরিচালক আব্দুল গফুর।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কৃষি জমির টপ সয়েল ইটভাঁটি যাওয়ায় জমি অনুর্বর হয়ে পড়ছে। এতে করে ফসল উৎপাদনেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব।
খালকুলা এলাকায় নির্মিত দুটি ইটভাঁটির সালফারে ফসল বিনষ্ট হওয়ায় ইতোপূর্বে তাড়াশ থানায় একাধিক অভিযোগও দায়ের করেছেন স্থানীয় কৃষক। কিন্তু ইটভাঁটির মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোনো বিচার পাননি বলে অভিযোগ করেন মাটিয়ামালিপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম।
চলনবিল বাঁচাও আন্দোলনের নেতা ও সাংবািদক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, ভাঁটি মালিকগণ কোনো প্রকার আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের নাকের ডোগায় তাদের এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। যার ফলে চলনবিল অঞ্চলে কৃষি, জনজীবন ও জীববৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশ-প্রতিবেশের স্বার্থেই পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করতে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনকেও উদ্যোগ নিতে হবে কেউ যেন এ ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে।
এ প্রসঙ্গে এস এম ব্্িরকসের স্বত্বাধিকারী মো. শাহ আলমের কাছে তাদের এ ধরনের বেআইনি কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যকটি ভাটার লাইসেন্স রয়েছে। তবে নবায়ণ নেই। জেলা প্রশাসন নবায়ন করলেই আমরা তা করে নিব। সরকারও রাজস্ব পাবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, ভাঁটি মালিকদের এ দাবি সত্য নয়। ইটভাঁটির লাইসেন্স পাওয়ার প্রধান শর্ত পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। এ ছাড়পত্র না থাকলে কাউকে লাইসেন্স দেওয়ার সুযোগ নেই।