ফাইল ছবি
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্বজনদের সাথে চিকিৎসকের হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় শম্পা বেগম (৩৯) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।
রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালটির জরুরি বিভাগের দ্বিতীয় তলায় এই ঘটনাটি ঘটে।
শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদ হাসান জানান, ঢাকা মেডিকেলে এক নারী চিকিৎসকের সাথে রোগীর স্বজনদেরর হাতাহাতি হয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ডা. মানার হাফিজ মারধর ও সরকারী কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এতে অভিযুক্ত শম্পাকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী মোমেনা বেগমের (৪০) মেয়ে হাফিজা আক্তার জানান, তাদের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার মোজাখালী গ্রামে। তার মা স্ট্রোক করায় গত ২১ ডিসেম্বর ভোরে ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় তলায় ২০০ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়ে ছিলেন, তার মায়ের অবস্থা ক্রিটিক্যাল। তার আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। এর পর বিভিন্ন জায়গায় আইসিইউ খুঁজতে থাকেন স্বজনরা। কিন্তু কোথাও আইসিইউ ম্যানেজ করতে পারছিলেন না। রোগী মোমেনা হাসপাতালটিতেও বিছানা না পেয়ে ফ্লোরে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অক্সিজেন সাপোর্টও পাচ্ছিলেন না।
তিনি আরও বলেন, ২২ ডিসেম্বর রোববার সারাদিন চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেনি। হাসপাতালে ছিল আমার খালা শম্পা ও খালু নাজির হোসেন। রোববার রাতে আমি আফতাব নগরের বাসায় ছিলাম। রাত ১০টার দিকে খালা ফোন করে আমাকে জানান, আমার মায়ের অবস্থা ভালো না। এটি শুনে আমি দ্রুত হাসপাতালে আসি। এরপর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মানার হাফিজ আসেন ২০০ ওয়ার্ডে রোগীর কাছে। চিকিৎসক রোগী দেখে জানান, আমার মা আর নেই।
তিনি আরো বলেন, আমার মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি বলার পর চিকিৎসক চলে যাবার সময় আমার খালা শম্পা বেগম ওও চিকিৎসকের হাত ধরে টান দিয়ে বলেন, সারাদিন আমার বোনকে দেখতে আসেনি কোন চিকিৎসক। তবে চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা হয়নি। তখন চিকিৎসক উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করতে থাকে। এসময় দায়িত্বরত আনসাররা জড়ো হয়ে যায়। তখন বারবার চিকিৎসকের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। এসময় পাশের বেডের একটি ছেলে চিকিৎসকের হাত ধরে ক্ষমা করে দিতে বললে তিনি আরও উত্তেজিত হয়ে পরেন। তবে ওই ছেলেকে তিনি চিনেন না। পরে আমার বোনকে ধরে পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যায়।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক বলেন, গতরাতে হাসপাতালে রোগী মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে এক নারী চিকিৎসকের গায়ে হাত দিয়েছে রোগীর স্বজনরা। এই ঘটনায় রোগীর স্বজন শম্পা বেগম নামে একজনকে আটক করে শাহবাগ থানায় দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েকজন রোগীর স্বজনরা বলেন, গত দুইদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসকের সংখ্যা খুবই কম। পরে জানতে পেরেছি কিছু ডা. বেতন ভাতার বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করছেন। তারা বর্তমানে কর্মবিরতিতে আছেন।
এরআগে, গত ৩১ আগস্ট অবহেলায় এক শিক্ষার্থী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারধরের ঘটনা ঘটে। হামলায় নিউরোসার্জারি বিভাগের কয়েকজন চিকিৎসক আহত হন।
মো. মহিউদ্দিন