নাসিমা ও তার প্রেমিক রাসেল
বোরকা পরা এক নারী আর তার পেছনে পুরো গ্রামের ভিড়। কৌতুহলী মানুষ এক নজর দেখতে চায়, কে এই নারী। কেউ ভাবছেন নতুন বউ। কিন্তু না, তিনি কোন নতুন বউ নন বরং ছ্যাঁকা খাওয়া এক প্রেমিকা। পরকীয়া করে প্রথম স্বামীকে তালাক দিয়ে সন্তানসহ এই নারী এসে বসেছেন প্রেমিকের বাড়ির সামনে। শুধু কী তাই, দাবিও রয়েছে বিয়ে করতেই হবে। না করলে কীটনাশক খেয়ে শেষ করবেন তার জীবন। আর সেই ভয়ে প্রেমিক তার বাড়ি ছেড়ে পগারপার। সাথে তার পুরো পরিবার দরজা জানালা বন্ধ করে হয়ে গেছে হাওয়া। তাই এই নারী খালি বাসায় বাজিয়ে যাচ্ছে অনশনের তালি। ঘটনাটি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার গামছা খালি গ্রামের।
অনশন করা ওই প্রেমিকা বলেন, ‘আমি এক অফিসে চাকরি করতাম। ওখান থেকে বন্ধুত্ব হয়েছে। তা থেকে রিলেশন, আমার বাসায় যেত-আসতো। তার সাথে আমার শারীরিক সম্পর্ক সবই হয়েছে। তিন বছর ধরে এক টানা তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।’
এক সন্তানের জননী নাসিমা আক্তার অনন্যা। চার বছর আগে ঢাকার একটি গার্মেন্টসে কাজের সূত্রে তার পরিচয় হয় নোয়াখালীর রাসেলের সঙ্গে। সম্পর্ক গড়ায় প্রেমে। আর সেই প্রেমের টানে রাসেল নিয়মিত নাসিমার বাসায় যাতায়াত করতেন। এমনকি, তারা বিভিন্ন জায়গায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়েও থেকেছেন।
রাসেলের গ্রামে ওই নারীকে নিয়ে আসা এক পুরুষ বলেন, নাসিমা বিষ খেয়েছে, গলায় দড়িও দিয়েছে। আমরা তার মেডিক্যাল ট্রিটমেন্ট করার পরেও তিনি বিষ হাতে নিয়ে ঘুরতেছেন। পরে তিনি বলেন যে রাসেলের বাড়ি যাবেন। এখন তিনি একা বের হয়ে যাওয়ায় আমার কাজ ফেলে রেখে তাকে নিয়ে আসছি। আমি চাই এটার কঠোর একটা বিচার হোক।
তবে গল্পে মোড় নেয় অন্যদিকে। নাসিমা জানান, রাসেল তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে গেছেন এবং বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকাপয়সা নিয়েছেন। এমনকি, নাসিমা রাসেলের প্রতিশ্রুতি পেয়ে তার প্রথম স্বামীকে ত্যাগ করেছেন। প্রেমের সম্পর্ক জানাজানি হওয়ার পর রাসেল তার গার্মেন্টসের চাকরি হারান। তবুও সম্পর্ক চালিয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ করেই রাসেল দূরত্ব তৈরি করেন। পরে যোগাযোগ বন্ধ।
রাসেলের সাথে আমার সম্পর্ক চার বছর ধরে। ওর জন্য আমার সংসার ভেঙে গেছে। সেই ঘরে আমার একটা বাচ্চাও ছিল। রাসেল আমার থেকে অনেক টাকা পয়সাসহ কিছু আনছে। আমাকে বিয়ে করার কথা বলছে। এখন এই ১০ তারিখে সে পালিয়ে চলে আসছে। বিয়ে করবে না। আমি আজকে চারদিন ধরে এখানে এসে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছি। আমি থানায় গিয়েছি। তারা ধরা দিবে বলে ধরা দেয় না। আমি এটার বিচার চাই, আর নয়তো তারা যদি আমাকে মেনে না নেয় তাহলে আমি এখানে আত্মহত্যা করব।
এদিকে, স্থানীয়দের কেউ কেউ রাসেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
হাতিয়া থানা পুলিশ জানায়, তারা খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছেন। রাসেলের পরিবারের খোঁজ চলছে। আর নাসিমার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নাসিমা অভিযোগ দায়ের করলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
এম হাসান