ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

মতবিনিময় সভায় বদিউল আলম মজুমদার

আগামীতে নির্বাচন হবে ইভিএম মুক্ত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস

প্রকাশিত: ২৩:৫৮, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

আগামীতে নির্বাচন হবে ইভিএম মুক্ত

.

আগামীতে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহৃত হবে না। অনুরূপভাবে নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যারা থাকবেন তারাও কোনো পক্ষের জন্য ব্যবহৃত হবেন না। বর্তমানে সবার আকুতি একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। যার মাধ্যমে        গণতন্ত্র একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা করছি। মানুষের কাছ থেকে যা শুনেছি এবং আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কিছু প্রস্তাব দেব। কিন্তু বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব নয়। আমরা আশা করছি রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এগুলো বাস্তবায়ন করবে।
রবিবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ কথা বলেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, মুক্ত আলোচনার প্রয়োজন ছিল সেটি হয়েছে। আমাদের কাজ হল নির্বাচনী সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিনিধিদের অভিজ্ঞতা শুনেছি এবং তাদের সুপারিশ প্রস্তাব শুনেছি। নির্বাচন কমিশন, সংসদ নির্বাচন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, ভোটার তালিকা, রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রের ব্যাপারে, নির্বাচনী অপরাধ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে সভায়।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ-উচ্ছ্বাস। মানুষ আমাদের যেখানে দেখে দুটো কথা বলতে চায়। তাদের মনে আকুতি ব্যক্ত করতে চায়। তাদের সবারই আকুতি একটা সুষ্ঠ নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। যার মাধ্যমে গণতন্ত্র একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াবে। এটা জনআকাক্সক্ষা। আমরা সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছি। মানুষের কাছ থেকে যা শুনেছি এবং আমাদের জ্ঞানবুদ্ধি, অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে কিছু প্রস্তাব দেব। কিন্তু বাস্তবায়ন আমাদের দায়িত্ব নয়। আমরা আশা করছি রাজনৈতিক দল, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন এগুলো বাস্তবায়ন করবে।
সব দলের নির্বাচন অংশগ্রহণ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আমাদের কাজ নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া। কারা নির্বাচনে আসবে, আসবে না; কারা যোগ্য কিংবা কারা যোগ্য নয় সে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। সেটি আমাদের এখতিয়ারের বাইরে।
প্রশাসনের কর্মকর্তারা ব্যবহৃত হতে চান না বলে জানিয়েছেন উল্লেখ করে বদিউল আলম বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন তারা সরকার বা কারও পক্ষের ব্যবহৃত হতে চান না। উনারা চান সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই উনারা সেভাবে দায়িত্ব পালন করতে চান। নির্বাচনী হলফনামায় ভুয়া ও মিথ্যা তথ্য থাকে, গোপন থাকে; সেগুলো বিবেচনায় নিচ্ছি, তবে আমাদের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়নি। আমরা এগুলো সব বিবেচনায় নিচ্ছি। আশা করছি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার প্রস্তাব আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পেশ করব। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচনী ট্রেনটা যাতে ট্র্যাকে উঠে, এজন্য প্রথম কাজটি দরকার ছিল নির্বাচন কমিশন গঠন করা, উনারা তাই করেছেন। আমাদের কাজের সঙ্গে তাদের কাজের সাংঘর্ষিক অবস্থা বিরাজ করছে না। তাদের অনেকগুলো কাজ আছে। অনেক রকম প্রশ্ন আছে, যে আইনের অধীনে করা হয়েছে, কিন্তু একটা ত্রুটিপূর্ণ আইনে সঠিক ব্যক্তিরা যদি অনুসন্ধান কমিটির সদস্য হয়, ওই সঠিক ব্যক্তিরা কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারেন। আমরা যতটুকু দেখেছি, যাদের নিয়ে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে তারা নিরপেক্ষ ও সম্মানিত ব্যক্তি। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, আমাদের জন্য সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবেন।
অনেক দল গণহত্যার সঙ্গে জড়িত নির্বাচন পরবর্র্তী তাদের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ থাকবে কিনা প্রশ্নের জবাবে বদিউল আলম বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত থাকবে। ওইসব সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, আইনগত সিদ্ধান্ত। ওসব সিদ্ধান্ত মূলত আমাদের নয়। সংবিধান পরিবর্তনের বিষয়টি আরেকটি কমিশনের। পঞ্চদশ সংশোধনীর বিষয়ে তো আমরা মামলা করেছিলাম।
ইভিএম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইভিএমের প্রশ্নই আসে না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও বলেছে, আমরাও প্রস্তাব করব। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সভা করেছি-সুস্পষ্টভাবে বলেছি-জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যাপারে আমাদের জোরালো প্রস্তাব প্রতিবেদনে থাকবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয়ভাবে নয় নির্দলীয়ভাবে করার সুপারিশ এসেছে-আমরা সিদ্ধান্ত নিইনি। আমরা এ বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিয়ে সুপারিশে প্রস্তাব করব।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্কার কমিশনের সদস্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আবদুল আলীম ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম প্রমুখ।

×