অযত্ন-অবহেলায় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের দামি যন্ত্রাংশগুলো এভাবেই নষ্ট হয়ে পড়ে আছে
কথায় বলে কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নাই। এমনটি হয়েছে খুলনাঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের ক্ষেত্রে। যা বন্ধ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার বছর আগে। দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে প্রতিটি মিলের কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো। কিন্তু এখনো মিলগুলো ব্যবস্থাপনার কাজে আছে ৯ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। দৃশ্যত তাদের কোনো কাজ না থাকলেও বেতন-ভাতাসহ এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় দুইশ’ ৪২ কোটি টাকা। অপরদিকে পাওনা না পওয়ায় চরম অসন্তোষে মিলের শ্রমিকরা। আর নাগরিক নেতাদের দাবি ভুলনীতির কারণে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হচ্ছে দিনের পর দিন।
নগীরর শিল্পাঞ্চল খ্যাত খালিশপুর এক সময় মুখরিত থাকত পাটকলের মেশিনের শব্দে। শ্রমিকরা ব্যস্ত থাকত দিনরাত ২৪ ঘণ্টা। কেউ কাঁচাপাট মিহি করা, কেউ সুতা তৈরি আবার কেউ সেই সুতা দিয়ে বস্তা কিংবা চট তৈরি করত। এরই সঙ্গে চলত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচাপাট সংগ্রহ ও উৎপাদিত পণ্য বিক্রির মহোৎসব। কিন্তু লোকসানের অজুহাতে বিগত সরকারের সিদ্ধান্তে খুলনার ৯টিসহ দেশের ২৬টি পাটকলের শেষ সাইরেন বেজেছিল ২০২০ সালের ৩০ জুন। এখন তালাবদ্ধ মিলের ফটকগুলো। সরেজমিন দেখা যায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় মিলের যন্ত্রপাতি মরিচা ধরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে। মকড়শার জাল গিলে খাচ্ছে মালামাল। অবকাঠামোর অবস্থাও নাজুক। বাইরের পরিবেশ জঙ্গলে ভরে গেছে।
বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্যমতে ৯টি পাটকলের মধ্যে খুলনাতে আছে ক্রিসেন্ট, স্টার, ইস্টার্ন, খালিশপুর, আলিম, দৌলতপুর ও প্লাটিনাম জুটমিলস। আর যশোরে আছে কার্পেটিং ও জেজেআই। মিল বন্ধ হলেও প্রতিটি মিলে আছে জিএম, ডিজিএম কিংবা হিসাবরক্ষকসহ ৯০৩ জন লোকবল। এর মধ্যে কর্মকর্তা ৩১১ জন ও কর্মচারী ৫৯২ জন। পাটকল সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান বলেন, কথা ছিল দুই মাসের মধ্যে শ্রমিকদের সব পাওনাদি বুঝে দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো তা হয়নি। পাওনার জন্য শ্রমিকরা রাস্তায় নামে। পাওনা না পাওয়ায় অনেক শ্রমিক পরিবার অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। চিকিৎসা হচ্ছে না অথের অভাবে। আর দিনে দিনে ধ্বংস হচ্ছে মিলের মালামাল।
অপরদিকে খালিশপুর জুটমিল এমপ্লয়ী ইউনিয়নের সভাপতি আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, যেখানে শ্রমিকরা পাওনা পাইনি সেখানে প্রায় এক হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বসে বসে বেতন নিচ্ছেন।
বিজেএমসি খুলনার আঞ্চলিক সমন্বয় কর্মকর্তা গোলাম রব্বানী বলেন, আমাদের সরকার রেখেছে বলে আমরা আছি। আমরা এখন মিলের সম্পদ পাহারা দিচ্ছি। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যে পর্যন্ত বরাদ্দ পেয়েছি সে পর্যন্ত দিয়েছি। পরবর্তীতে সরকার যদি আবার বরাদ্দ দেয় তাহলে শ্রমিকরা পাবে।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, তখনকার সরকারের একটা ভুল নীতির কারণে শুধু খুলনাঞ্চলে ২৫ হাজারের অধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ে। তখন বলা হয়েছিল এক হাজার কোটি টাকা দিয়ে মিলের মেসিন বিএমআরআই (মেরামত) করে মিলগুলোতে লাভের মুখ দেখা সম্ভব। কিন্তু সরকার সাত কোটি টাকা দিয়ে মিলগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এরই সঙ্গে সোনালি আঁশের সোনালি দিন হারিয়ে গেল। অথচ দেশের মধ্যে বেসরকারি ও পার্শ্ববর্তী দেশের পাটকলগুলো ঠিকই লাভে চলছে।