ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

জামালপুরের মাদারগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জামাই মেলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

জামালপুরের মাদারগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে জামাই মেলা

জামালপুরের মাদারগঞ্জে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৮ দিন ব্যাপী জামাই মেলা

প্রতিবছরের মতো এবারও তৃতীয় বারের মতো ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনায়  জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার চরপাকেদহ ইউনিয়নের পলাশপুর বাজার এলাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আটদিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা। পৌষ মাসের প্রথম দিন গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। মেলা চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। স্থানীয়ভাবে এ মেলাকে অনেক নামেই ডাকা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, জামাই মেলা, বৌ মেলা, পোড়াদহ মেলা বা মাছের মেলা। মেলার প্রথম দিনেই হাজারও মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। জামাই মেলার মূল চরিত্র ‘জামাই’ সম্পর্কের মানুষগুলো, মেলার সময় আশপাশের গ্রামগুলোতে মেয়ে আর জামাইকে দাওয়াত করে আনা হয়। জামাতারা মেলা থেকে বড় বড় মাছ কেনেন শ্বশুরবাড়ির জন্য। আবার জামাইকে মেলায় কেনাকাটার জন্য শশুর শাশুড়ি টাকা দেন। সেই টাকা দিয়েই মেলা থেকে কেনাকাটা করে শ্বশুর বাড়িতে যান। গত দুই বছর ধরে স্থানীয় এলাকাবাসীর উদ্যোগে এ জামাই মেলা শুরু হয়েছে। জামাই মেলায় প্রায় সাড়ে ৪০০টি বিভিন্ন ধরনের দোকান রয়েছে। এর মধ্যেই এক পাশে সারি সারি মাছের দোকান। সেগুলোতে আছে বোয়াল, কাতল, বাগাইড়,আইড় চিতলসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। সেসব মাছের ওজন ৫ থেকে ২০ কেজি বা তারও বেশি। মেলায় বিক্রি হচ্ছে হরেক প্রজাতির মাছ, মিষ্টিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। মেলার আয়োজক কমিটি ও স্থানীয়রা বলেন, তিন বছর থেকে জামাই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এই মেলার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আত্মীয়-স্বজনদের সম্পর্ক আরও গভীর করার। এই মেলা উপলক্ষে কয়েক এলাকার লোকজন তাদের আত্মীয়-স্বজন ও মেয়ে, জামাইকে দাওয়াত করে ডেকে আনা হয়। জামাই মেলা থেকে জামাইয়েরা কেনাকাটা করে শ্বশুরবাড়ি যান। মেলায় আত্মীয়-স্বজন এলাকার জামাইদের নিয়ে ঘুরতে আসেন। চরপাকেরদহ এলাকার রবিউল ইসলাম বলেন, জামাইকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছি, মেলা থেকে কেনাকাটা করার জন্য। মেলা উপলক্ষে কয়েকটি গ্রামের মানুষ তাদের মেয়ে জামাইকে দাওয়াত করে এনেছে। মেলায় ঘুরতে আসা হুরাইরা বিনতে আলম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, এই মেলা উপলক্ষে স্থানীয়রা তাদের মেয়ে জামাইকে এবং আত্মীয়-স্বজনসহ সবাইকে দাওয়াত করে আনে। এই মেলার মধ্যে আত্মীয়স্বজনদের সম্পর্ক আরো বেশি সুন্দর ও গভীর হবে। আবদুল বারিক নামে একজন বলেন, আমার শ^শুর দাওয়াত করে এনেছেন। গতকাল এসেছি শ্বশুর বাড়িতে, আজ মেলায় আসার আগে শ^শুর হাজার টাকা দিয়েছেন। এ সময় শাশুড়ি আরও কিছু টাকা দিয়েছেন লুকিয়ে। মেলা থেকে বড় একটি মাছ কিনেছি। শ^শুর শাশুড়ির জন্য পান সুপারি নিয়েছি। আমার একটি ছোট শালিকা আছে তার জন্য এখন কিছু মিষ্টি জাতীয় খাবার নিয়ে যার শ্বশুরবাড়িতে। জামাই মেলা উদযাপন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মোখলেছুর রহমান মোখলেস জনকণ্ঠকে বলেন, তিন বছর থেকে জামাই মেলার আয়োজন শুরু করেছি। গত বছরের মেলায় জাঁকজমক ও সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে আয়োজন। এবছরে প্রথম দিনেই মেলায় ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলা সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। মেলায় শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা খুবই দায়িত্বশীল। মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাসান আল-মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, মেলা প্রাঙ্গণকে নিরাপদ রাখতে আমরা দুই স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। মেলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পুলিশের পাশাপাশি পোষাকধারী পুলিশও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়াও মেলার নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন রাখতে দুই শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীও কাজ করে যাচ্ছেন।

মোহাম্মদ আলী

×