বিজয় দিবস উপলক্ষে সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামে গ্রামীণ খেলায় মেতে উঠেছে যুবসমাজ
চল্লিশ থেকে পঞ্চাশোর্ধ্ব প্রতিযোগীদের যেন উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। সবার চোখ গামছা দিয়ে বাঁধা। প্রায় ৫০ গজ দূরেই তাদের জন্য রাখা মাটির হাঁড়ি। হাঁড়িটি ভাঙার জন্য হাতে দেওয়া হয়েছে বাঁশের লাঠি। বিচারকের বাঁশি শুনেই পর্যায়ক্রমে হাঁড়ির দিকে ছুটছেন চোখবাঁধা প্রতিযোগীরা। অনুমান করে হেঁটে গিয়ে হাঁড়ি ভাঙার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন তারা। অনেকের ব্যর্থতার পর একজন হাঁড়ি ভাঙতেই উল্লাসে ফেটে পড়ছেন দর্শকেরা। শুধু হাঁড়ি ভাঙা নয়, যশোর সদর উপজেলার বলাডাঙ্গা গ্রামে হা-ডু-ডু, হাঁস ধরা, মোরগ লড়াই, বালিশ বদল, তৈলাক্ত কলাগাছে ওঠা, অংক দৌড়, বস্তার উপরে বসে টানা দৌড়, অন্ধভাবে পথ চলা, মেরুদণ্ডের শক্তি পরীক্ষাসহ ২২টি খেলায় মেতে ওঠেন গ্রামের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’র প্রতিযোগিতাও।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার দিনভর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বলাডাঙ্গা গ্রামে স্থানীয় যুবসমাজ। আনন্দ-বিনোদনের গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া খেলায় অংশ নিয়ে অনেকেই যেন ফিরে যান শৈশবে। অতীতের স্মৃতিচারণ করলেন অনেকেই। আর তথ্যপ্রযুক্তি ও আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ ঐতিহ্যের এমন আয়োজন দেখতে আশপাশের গ্রামের শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের সহস্রাধিক দর্শকের সমাগম হয়।
আকবর ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, এ ধরনের খেলাধুলা এখন আর হয় না গ্রামে। আগে পাড়ায় পাড়ায় হতো। অনেকদিন পর এ ধরনের খেলাধুলা করতে পেরে শৈশবে ফিরে গেলাম।
খেলায় বয়স যেন কোনো বাধা নয় সেটি আবারও প্রমাণ মিলল এই আয়োজনে। ছোট-বড়-বৃদ্ধরা বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়ে নিজ পারদর্শিতায় হয়েছেন প্রথম, দ্বিতীয় তৃতীয়।
দীর্ঘদিন পর হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ এসব খেলাধুলা দেখে মুগ্ধ যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এসব খেলাধুলা দেখে শৈশবে ফিরে গেলাম। এখন আর এমন প্রতিযোগিতার আয়োজন গ্রামে গ্রামে হয় না। তাই তো গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় মানুষের মধ্যে বন্ধন-হৃদতা কমে যাচ্ছে। সামাজিকভাবে বন্ধন অটুট রাখতে এমন আয়োজন বেশি বেশি করা উচিত। অনুষ্ঠানের অন্যতম আয়োজক ও যশোর সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলাগুলোকে আগামী প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতেই এ ধরনের আয়োজন। অন্যদিকে শিশুরা এখন মুঠোফোনের আজব বাক্সে বন্দি। ভুলতে বসেছে গ্রামীণসব ঐতিহ্য। অনেকেই আবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।