দুর্যোগকালীন জেলেদের আশ্রয়স্থল খাপড়াভাঙ্গার নদীর চ্যানেল
কাগজপত্রে খাপড়াভাঙ্গা নদী হলেও স্থানীয়রা চেনেন শিববাড়িয়ার চ্যানেল হিসেবে। কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর সাগরবক্ষে মাছ শিকাররত জেলেদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল। প্রতিনিয়ত সাগরবক্ষে মাছ শিকার শেষে হাজারো ফিশিং বোট এই নদীতে নিরাপদে আশ্রয় নেয়। নদীর মহিপুর-আলীপুর বন্দরে ট্রলারের মাছ লোড আনলোড করে। এটিকে স্থায়ীভাবে পোতাশ্রয় করার লক্ষ্যে আন্ধার মানিক মোহনা থেকে সাগরের কাউয়ার চর মোহনা পর্যন্ত এই চ্যানেল খননের উদ্যোগ ১৩ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি।
উল্টো পলির আস্তরণে তলদেশ ভরাটের পাশাপাশি চ্যানেলটির তীর দখল করে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা তোলা হয়েছে। স্থাপন করা হয়েছে করাতকল, ইটভাঁটি। ফেলা হচ্ছে প্লাস্টিক, পলিথিন, ছেড়া জাল ও কর্কশিট বর্জ্য। ভাটিতে নৌযান চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। ফলে জেলেরা দুর্যোগকালীন আশ্রয়স্থল হারাতে বসেছে।
জানা গেছে, ২০১০-১১ অর্থবছরে খাপড়াভাঙ্গা চ্যানেলটি পুনর্খননের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী অফিস থেকে একটি পিপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। নদীটি কাগজপত্রে ১৭ কিমি দীর্ঘ হলেও আশাখালীর অংশ নিয়ে দৈর্ঘ্য আরও বেশি। চ্যানেলটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় পুনরায় নাব্য সৃষ্টি, মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলেদের লোডিং-আনলোডিংয়ের সুবিধা, চ্যানেলটির দুই পাড়ে বেড়িবাঁধের ভেতরের সংযোগ স্লুইসখালে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ঠিক রাখা এবং কৃষি কাজের স্বার্থে সরকারিভাবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
চ্যানেলটি খনন হলে দুর্যোগকালীন জেলেরা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ পেত। চ্যানেলটি পুনর্খননের প্রকল্প তৈরি করে প্রায় ৬৭ কোটি ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশল অফিস সূত্রে তৎকালীন সময়ে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া গেলে এই খনন কাজ শুরুর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রকল্প আর আলোর মুখ দেখেনি।
সাগর মোহনার রামনাবাদ পয়েন্ট থেকে কাউয়ারচর আশাখালী পয়েন্ট পর্যন্ত শিববাড়িয়া চ্যানেলটি অবস্থিত। দীর্ঘ এই চ্যানেলটির দুই দিক দিয়ে জেলেরা সাগরে মাছ শিকারে যাওয়া আসা করছে। কিন্তু চ্যানেলটির আন্ধার মানিক এবং আশাখালী প্রবেশদ্বারসহ ৯০ শতাংশ ভরাট হয়ে গেছে। জোয়ারের সময় জেলেরা কিছুটা নিরাপদে চলাচল করতে পারছে। ভাটায় চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়েছে। উত্তাল সাগরে ঝড়-জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হলে দ্রুত নিরাপদে আশ্রয় নেয়ার জন্য এই চ্যানেলটি ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
কিন্তু দুই দিকের সাগর মোহনা থেকে দীর্ঘ চ্যানেলটি পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়ায় ট্রলারসহ বিভিন্ন ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধের আশঙ্কা হয়েছে। চ্যানেলটি দুইদিকে লতাচাপলী, মহিপুর, ডালবুগঞ্জ, ধুলাসার ইউনিয়ন অবস্থিত। দুই দিকে রয়েছে বেড়িবাঁধ। ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় চ্যানেলটি খননের বাস্তবতা নিরূপণের লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের তৎকালীন কর্মরত উপবিভাগীয় প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন জানিয়েছিলেন, চ্যানেলটির তলদেশ তিন মিটার থেকে কোথাও কোথাও আট মিটার পর্যন্ত গভীর খনন করতে হবে। এ ছাড়া প্রস্থ ৩০ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ মিটার পর্যন্ত খনন করতে হবে।
এই চ্যানেলটি খনন করলে জেলেদের সবচেয়ে বেশি সুবিধা হবে বলে জানালেন, উপকূলীয় মাঝি সমিতির সভাপতি মো. নুরু মিয়া। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শাহআলম ভুইয়া জানান, তিনি বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দেখবেন। ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেন।
