ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১

ইজতেমার সাদপন্থী বাংলাদেশস্হ আমির হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ২০ ডিসেম্বর ২০২৪

ইজতেমার সাদপন্থী বাংলাদেশস্হ আমির হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার

তাবলীগ জামাতের সাদ পন্থীদের বাংলাদেশস্হ আমির মুয়াজ বিন নূর (৪০) কে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকার উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের বাস ভবন থেকে তিনি গ্রেপ্তার হন বলে পুলিশ জনকণ্ঠকে জানিয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জোবায়ের গ্রুপ টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা মাঠে জোবায়ের গ্রুপের উপর সাদ গ্রুপের একতরফা হামলায় হতাহতের ঘটনায় টঙ্গী পশ্চিম থানায় ২৯ জনকে চিহ্নিত আসামি করে শত শত সাদপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে গ্রেপ্তার অভিযানে নামে পুলিশ। মুয়াজ বিন নুর হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি ছিলেন। গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এন এম নাসির উদ্দিন জানান, ইজতেমা ময়দান এখন শান্ত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত ১৮ ডিসেম্বর বুধবার ভোর রাত ৩টার দিকে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সাদ-জোবায়ের গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনার উভয় পক্ষে ৩ জন নিহত ও শতাধিক আহতের ঘটনা ঘটে। এ জন্য এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দায়ী করেছে। সাদ গ্রুপকে জোবায়ের গ্রুপ টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দানে জোড় এজতেমা করতে না দেয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার এজতেমা ময়দানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। আদি তাবলীগ জামাতের সাদ পন্থীদের বাংলাদেশস্হ মুখপাত্র হিসাবে পরিচিত ছিলেন মুয়াজ বিন নূর। তিনি সাদ গ্রুপের বাংলাদেশের আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার বাবার নাম নূর মোহাম্মদ। গ্রেপ্তার অভিযানে জিএমপি ও ডিএমপির সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাসহ যৌথবাহিনী সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দার হাবিবুর রহমান জনকণ্ঠকে মুয়াজ বিন নূরের গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উত্তরা পশ্চিম থানার ৭ নম্বর সেক্টর থেকে সাদপন্হী বাংলাদেশস্হ আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। টঙ্গী পশ্চিম থানায় করা হত্যা মামলার বাদী শুরায়ে নেজামের (জুবায়রপন্থি) সাথী এস এম আলম হোসেন। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর থানার গাইটাল গ্রামের এস এম মোক্তার হোসেনের ছেলে ও আলমি শুরার কিশোরগঞ্জ জেলার সাথী।
হত্যা মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, আব্দুল্লাহ মনসুর, ওসামা ইসলাম, ড. কাজী এরতেজা হাসান, মোয়াজ বিন নুর, জিয়া বিন কাশেম, আজিমুদ্দিন, সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, শফী উল্লাহ, আনাস, আব্দুল্লাহ শাকিল, রেজা আরিফ, আব্দুল হান্নান, রেজাউল করিম তরফতার, মুনির বিন ইউসুফ, সায়েম, হাজী বশির শিকদার, মনির হোসেন তুষার ওরফে হাজী মনির, ইঞ্জিনিয়ার মুহিবুল্লাহ, মো. আতাউর রহমান, তানভীর, বাবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার আবুল বশর, ইঞ্জিনিয়ার রেজানুর রহমান, নাসির উদ্দিন সিকদার, ড. আব্দুস সালাম, ওয়াসি উদ্দিন, মিজান ও শাহাদাত হোসেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে সাদপন্থিরা ২০ ডিসেম্বর জোড় ইজতেমা করার জন্য ১৮ ডিসেম্বর ভোর রাতে জোর পূর্বক বিশ্ব ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করে হতাহতের ঘটনা ঘটায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের আগে জোড় ইজতেমা নামে ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। জোবায়ের গ্রুপ জোড় ইজতেমা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার পর টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা মাঠ দখলে নিয়ে ঘোষণা দেয় ইজতেমা ময়দানে সাদ গ্রুপকে জোড় ইজতেমা করতে দেয়া হবে না। সাদ গ্রুপও ঘোষণা দেয় তারা যে কোন মূল্যে ইজতেমা ময়দানে জোড় ইজতেমা করেই ছাড়বেন। এর পরই বিবদমান দু'গ্রুপ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ায়।
এনিয়ে জোবায়ের-সাদ গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজের এক পর্যায়ে হামলায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জোবায়ের গ্রুপকে মাঠ থেকে হটিয়ে সাদ গ্রুপ ২০ ডিসেম্বর জোড় ইজতেমা করার প্রস্তুতি নিতে থাকে। হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় ইজতেমা মাঠ ও এর আশপাশের ৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে গাজীপুর মহানগর পুলিশ প্রধান ডক্টর নাজমুল করিম। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক কড়াকড়ি অবস্থানে সাদ গ্রুপ মাঠ ছেড়ে চলে গেলে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসে। এদিকে ৩১ জানুয়ারি থেকে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠানের ঘোষণা রয়েছে। ইজতেমা ময়দানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে টঙ্গীর পুরো এলাকায় সেনাবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে।

মোহাম্মদ আলী

×