বাহারি রং ও আকর্ষণীয় সুগন্ধের জন্য লিলিয়ামের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। লিলিয়াম ক্ষেতের দিকে তাকাতে সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে যায়। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, কানাডা, আমেরিকার মতো শীতপ্রধান দেশে লিলিয়াম ফুলের ব্যাপক চাষ হয়। সেই লিলিয়াম চাষে সফলতার স্বপ্ন বুনছেন উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামের তরুণ প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ।
উদ্যোক্তা হিসেবে পরীক্ষামূলক চাষে প্রথমবারেই সফলতা পেয়েছেন ফয়সাল আহম্মেদ। মাত্র ৩৪ দিনে তার বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছে। বেশকিছু ওষুধিগুণও রয়েছে এ ফুলের। এ অঞ্চলের কৃষক ও আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তারা লিলিয়ামে বাণিজ্যিক উৎপাদনে নতুন সম্ভাবনা দেখছেন। তাদের মতে, লিলিয়াম ফুল চাষে নবদিগন্ত তৈরি হবে ‘ফুল বানিজ্যে”।
প্রত্যন্ত গ্রামে ফোটা এ ফুল নিয়ে স্থানীয়দের আগ্রহের শেষ নেই। ফুল দেখতে প্রতিদিনই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন ফয়সালের বাগানে। ফুল বিক্রি করে ভালো লাভের আশা করছেন চাষি ফয়সাল। ভবিষ্যতে দেশের বিভিন্ন জেলায় লিলিয়াম ফুলের চাষ ছড়িয়ে দেওয়ার আশা কৃষি বিভাগের।
উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, লিলিয়াম ফুল চাষের আগ্রহ থেকে বীজের জন্য লাল তীর নামের একটি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাদের মাধ্যমে জানতে পারি এ ফুলের বীজ হয় না। লালতীরের সহযোগিতায় নেদারল্যান্ডস থেকে ২০০টি কন্দ এনে চাষ শুরু করি। জমি প্রস্তুত করে এক শতাংশ জমিতে ৩০ অক্টোবর পরীক্ষামুলকভাবে কন্দগুলো রোপণ করি। সাধারণত দুই মাসে ফুল আসার কথা থাকলেও, আমার জমিতে মাত্র ৩৪ দিনে বেশিরভাগ গাছে ফুল এসেছে। আশা করি নববর্ষ, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ভালো দামে এ ফুল বিক্রি করতে পারব।
ফয়সাল আরও বলেন, যতদূর জেনেছি, এটা খুব দামি ফুল। বাজারে চাহিদাও ব্যাপক। এরই মধ্যে অনেক কৃষকরা আসছেন চাষ করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। প্রতিদিন ফুলক্ষেত দেখতে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে স্কুল, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অনেকে ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন । প্রথমবারের মতো এ ফুল দেখে অনেকে উচ্ছ্বসিত।
ফুল দেখতে আসা লাভনী নামের এক তরুণী বলেন, এর আগে ইউটিউবে দেখেছি, আজ নিজের চোখে দেখলাম, ছবি তুললাম। ফুল দেখে অনেক ভালো লাগলো। আমরা চাই এ ফুলের চাষ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক।’
লালতীর সিড লিমিটেডের পরিচালক তাজওয়ার আউয়াল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বিদেশিদের সঙ্গে তালমিলিয়ে কৃষকদের সবজিসহ নানা কৃষি পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে নিতে। সম্প্রতি লেদারল্যান্ড থেকে লিলিয়াম ফুলের বাল্ব (কন্দ) এনে চাষিদের দেওয়া হয়েছে। অল্প দিনের মধ্যে ভালো উৎপাদন হওয়ায় বিদেশি জাতের লিলিয়াম ফুল সম্ভবনাময় দেখা গেছে। আশাকরি এ ফুলের উৎপাদন বাড়লে আগামীতে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলো রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে। এজন্য আমরা কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা করছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়. নেদারল্যান্ড, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার শীত প্রধান দেশগুলোতে লিলিয়াম ফুলের ব্যাপক চাষ হয়ে থাকে। সাধারণ সাদা, হলুদ, কমলা, গোলাপি, লাল ও বেগুনি বর্ণের লিলিয়াম ফুল দেখা যায়। এ ফুলের বর্ণচ্ছটা অনেকটা চিত্রের মতো। দেখতে কোনও শিল্পী তার তুলি দিয়ে ফুলের গায়ে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছে। এ জাতের ফুলে ছয়টি পাপড়ি থাকে যার বেশ প্রসারিত হয়। অভিজাত এলাকায় এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বেশকিছু ওষুধিগুণও রয়েছে এ ফুলের। কৃষি বিভাগের পরামর্শে মোল্লাহাটের গাফরা গ্রামের এক কৃষকের ক্ষেতে এ ফুল ফুটেছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শংকর মজুমদার বলেন, লিলিয়াম ফুল বর্ণ বৈচিত্র্য ও সুন্দর আকারের কারণে বাংলাদেশেও এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আমদানি করা প্রতিটি ফুল আমাদের দেশে দুই থেকে তিনশ টাকায় বিক্রি হয়। আশা করি জেলাব্যাপী লিলিয়াম ফুলের চাষের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যাতে কৃষকরা অল্প সময়ের মধ্যে চাষ করে লাভবান হতে পারেন।
তিনি আরও বলেন, লিলিয়াম একটি বিদেশী ফুল হলেও বর্তমানে বাংলাদেশে এর চাষ শুরু হয়েছে। ক্রমশ: জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে এই ফুলের বাল্বের চাহিদা অনেক। এর বিভিন্ন কালার বা’ রংয়ের হয়। বর্তমানে আমাদের দেশে ৮ থেকে ১০ বংয়ের লিলিয়াম পাওয়া যায়। বেশ কিছু প্রতিষ্টান এই ফুলের বাল্ব গুলো পাইকারি বিক্রয় করছে। একবার এ ফুলের বাল্ক কিনলে প্রতিবছর আর কিনতে হয় না। ফুল শেষ হবার পর বালির মধ্যে এর বাল্ক সংরক্ষণ করে পরের বছর তা ব্যবহার করা যায়। এর একটি বাল্ক থেকে একাধিক বাল্ক পাওয়া যায়। ফলে ক্রমশ: লিলিয়ামের বানিজ্যিক চাষ এ অঞ্চলে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
নাহিদা