টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারির পর বৃহস্পতিবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক অবস্থান
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা মাঠে তবলিগ জামাতের দুইপক্ষ-মাওলানা জোবায়ের ও মাওলানা সাদ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারী এসএম আলম হোসেন বাদী হয়ে জিএমপির টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও শত শত আসামি করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও বৃহস্পতিবার ইজতেমা মাঠের বিভিন্নস্থানে কিছু মুসল্লি অবস্থান করছেন। তাদের দাবি, কাঁথা-বালিশসহ বিভিন্ন মালামাল পাহারা দিতে মাঠে রয়েছেন তারা। এছাড়া ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। তবে মাঠের ভেতর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন স্টেশন রোডের মোড়, মুন্নু গেট, কামারপাড়া সড়ক, ইজতেমা মাঠে প্রবেশের গেটসহ আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছেন বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। এসময় কিছু মুসল্লিকেও বাঁশ হাতে নিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশের বিভিন্ন গেটে পাহারা দিতে দেখা গেছে।
মাঠে থাকা মুসল্লি খায়রুল বাশারসহ কয়েকজন জানান, মাঠে অবস্থানকারী সবাই মাওলানা জোবায়ের অনুসারী। মাওলানা সাদ অনুসারীরা মাঠ খালি করে দেওয়ার পর বুধবার দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময় তারা ইজতেমা মাঠে এসেছেন। এসব মুসল্লিসহ আমরা ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে মুরব্বিদের নির্দেশনা অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানের যাবতীয় মালামাল পাহারা দিতে বিভিন্ন জামাতভুক্ত প্রায় ৫শ’ সাথী মাঠে এসেছেন।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দুই পক্ষের সভা শেষে মাঠে থাকা মালামাল পাহারা দেওয়ার জন্য জোবায়ের অনুসারীদের ৫শ’ লোক থাকার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা মাঠে অবস্থান করছেন। তবে পুলিশের নির্দেশনা কার্যকর রয়েছে। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বুধবার দুপুরে ময়দানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশের গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করেন।
তবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মোহাম্মদ সায়েম বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইজতেমা ময়দান প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যেই সরকার জোবায়ের অনুসারীদের মাঠ বুঝিয়ে দিয়েছেন। তারা পাহারার নামে ঠিকই মাঠে অবস্থান করছেন। এটা আমাদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে ইজতেমা মাঠে মাওলানা সাদের অনুসারী মুসল্লিরা পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা সাদপন্থিদের মাঠে জোড় পালন করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেয়। এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জেরে বুধবার ভোরে উভয়পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের চারজন নিহত ও শতাধিক মুসল্লি আহত হন।
এ ঘটনায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি) ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এ বিজ্ঞপ্তি জারির পর সাদ অনুসারীরা ইজতেমা মাঠ ত্যাগ করে। তবে তাদের অনেক জামাতভুক্ত সাথী ময়দানের আশপাশের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, বাসা-বাড়ি ও মেসে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে জোবায়ের অনুসারীদের ওপর হামলা ও হতাহতের ঘটনায় সাদ অনুসারীদের দায়ী করে তাদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিবাবাড়ি-শিমুলতলী সড়কের পাশে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
এ ব্যাপারে জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি ইস্কান্দর হাবিবুবুর রহমান জানান, ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় অভিযুক্তদের নাম তদন্তের স্বার্থে এ মুহূর্তে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তবে আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানান।
যথাসময়েই ইজতেমাÑ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ইজতেমা ময়দানে সমাবেশ করার নিষেধাজ্ঞা অচিরেই কাটবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, যথাসময়েই ইজতেমা হবে। সহিংসতাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে মুন্সীগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা ও সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইজতেমা নিয়ে সহিংসতার বিষয়ে তদন্ত চলছে। সাদ এবং যুবায়ের দু’পক্ষই আমাদের সঙ্গে প্রেস ব্রিফিংয়ে ছিলেন। অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আসতেই হবে। তাদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। কঠোর হস্তে দমন করা হবে। যে কোনো পরিস্থিতি ও নির্বাচনের জন্য পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, ১৮৫ জনের মতো কাজে যোগ দেয়নি, এ সংখ্যা নগণ্য। বাকি পুলিশ সদস্যরা কার্যকরী অবস্থায় রয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনী র্যাব ও বিজিবি রয়ে গেছে। নির্বাচনসহ যে কোনো অবস্থা মোকাবিলা করা কোনো অসুবিধা হবে না।
মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্র্রেট ফাতেমা তুল জান্নাতের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শামসুল আলম সরকারসহ প্রশাসনের সকল বিভাগের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।