.
জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য নয় তবুও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন দুর্দশার মধ্যে পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। এই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য উন্নত বিশ্ব থেকে যে অর্থ পাওয়া যায় তা যথাযথ ব্যবহার না করার কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুতির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আলোচনার জন্য জ্ঞানভিত্তিক চর্চার পরামর্শ বিশিষ্টজনের। পাশাপাশি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে জলবায়ু কূটনীতি পরিচালনা এবং ক্রমাগত সম্পৃক্ততার বিষয়ে পরামর্শ তাদের।
বুধবার রাজধানীর নিউ ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এ আয়োজিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ু আলোচনা : বাংলাদেশের অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এ সব কথা বলেন। সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিআইএসএস-এর চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত এ এফ এম গাউসাল আজম সরকার।
সেমিনারে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘জলবায়ু বাজেটের সর্বোত্তম ব্যবহারে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ বরাদ্দের গাইডলাইন হালনাগাদ করা হয়েছে এবং এবার সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে প্রাপ্ত জলবায়ু ফান্ডের অর্থও যথাযথভাবে ব্যয় নিশ্চিত করতে হবে। কোনো কোনো খাতে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত তা নির্ধারণের কাজ চলছে। কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব না হলে, আরও অর্থ ব্যয় করেও বৈশ্বিক ক্ষতি রোধ করা যাবে না।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশগত সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। নদী ও খাল ভরাট হলে অভিযোজন কার্যক্রম চালানো সম্ভব হবে না। উন্নয়ন পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে হবে এবং ভোগবাদী জীবনযাত্রা পরিত্যাগ করতে হবে। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে, যা শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। দূষণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং সিঙ্গেল-ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমাদের অগ্রাধিকার এখন সহিষ্ণুতা বাড়ানো, অভিযোজনের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা এবং বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত ও সমতাভিত্তিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শুনতে হবে এবং উন্নত দেশগুলোর আর্থিক ও প্রযুক্তিগত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। পাশর্^বর্তী দেশ থেকেও আমাদের বায়ু দূষণ হয় উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘বায়ু দূষণের ৩০ শতাংশ পাশর্^বর্তী আসে পাশর্^বর্তী দেশ থেকে। ২৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয় বিদ্যুৎ প্ল্যান থেকে। এছাড়া ১৩ শতাংশ দূষিত হয় ধুলা বালি থেকে। তাই বায়ূ দূষণ প্রতিরোধে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। দ্রুত তারা কাজ শুরু করবে। তাই বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে সারাবছর কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আজারবাইজানের বাকুতে সাম্প্রতিক কপ-২০ শীর্ষ সম্মেলনে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, জলবায়ু রিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য এবং সম্মিলিত শক্তি তাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া তহবিলের চেয়ে বেশি অর্থবহ হবে। এ আলোচনায় জলবায়ু অর্থায়ন, ক্ষয়-ক্ষতি, জলবায়ু ন্যায়বিচার, জলবায়ু কর্মকান্ডে করুণদের ভূমিকা, ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উল্লেখযোগ্য মনোযোগ পেয়েছে।
সেমিনারে আলোচকবৃন্দ এবং অংশগ্রহণকারীরা বৈশ্বিক জলবায়ু কূটনীতিতে অন্যতম কণ্ঠস্বর হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকা এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুর্দশার কথা তুলে ধরেন। তারা জোর দিয়ে বলেন, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অবদানকারী নয়, তবুও দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য ঝুঁকিতে রয়েছে। অধিকন্তু, সম্ভাব্য ঝুঁকির আলোকে দেশটির কী কী বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন এবং কীভাবে তাদের আরও কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করেন। তাছাড়া, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বৃহত্তর পরিসরে জলবায়ু কূটনীতি পরিচালনা এবং ক্রমাগত সম্পৃক্ততার বিষয়ে তারা পরামর্শ প্রদান করেন।