ছিনতাইকারী
গাজীপুরের মৌচাকে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করেছে ছিনতাইকারীরা। ক্লুলেস এ ঘটনায় ৬ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে নিহতের মোবাইল, পরিচয়পত্র, মানিব্যাগসহ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সিএনজি ও চাপাতি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা দিনে শ্রমিকের বেশে থাকলেও রাতের আঁধারে হয়ে উঠতো ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। ছিনতাই করাই ছিল গ্রেপ্তারকৃতদের মূল পেশা।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- তাকওয়া পরিবহন সার্ভিসের মিনিবাস চালক ময়মনসিংহের মোঃ সরওয়ার হোসেন ওরফে শারু (২৮) ও হেলপার মোঃ মিলন (২৭), সিএনজি অটোরিকশার চালক কুড়িগ্রামের নাজিম উদ্দিন ওরফে নয়ন (৩৫) ও মোঃ ছাইফুল ইসলাম (৪২), আজমেরী গ্লোরী পরিবহন সার্ভিসের বাসের হেলপার লক্ষীপুরের মোঃ জুয়েল (২৪), চা দোকানদার ও চোরাই মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী ভোলা জেলার মোঃ আনোয়ার হোসেন (৩৫)। তারা সবাই গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক জামতলা এলাকার তানভির হোসেন নান্নু মিয়ার ছেলে তাজবির হোসেন শিহান (২৬) ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি তিনি রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি কল সেন্টারে চাকরি করতেন। তার মা শিরিন জামান স্থানীয় মৌচাক স্কাউট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক। গত ১২ ডিসেম্বর ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে মৌচাক এলাকার হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন শিহান। এসময় আরো তিনজন আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ ঘটনায় নিহতের বাবা পরদিন কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, ক্লুলেস এঘটনায় মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামীদের গ্রেপ্তারের জন্য তৎপর হয় পুলিশ। পুলিশের বিশেষ টিম সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করে এবং তাদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পারে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বিভিন্ন পেশায় থাকার আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে আসছিল। তারা দিনে শ্রমিকের বেশে থাকলেও রাতে হয়ে উঠতো ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী। ছিনতাই করাই ছিল তাদের মূল পেশা।
পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার ভোররাতে মহানগরীর সালনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চা বিক্রেতা ও চোরাই মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার হোসেনকে গ্রেপ্তার এবং হতাহতদের কাছ থেকে ছিনতাইকৃত চারটি মোবাইল উদ্ধার করে। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সকাল পর্যন্ত সালনা, বাসন, কোনাবাড়ী, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর ৫জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এসময় গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে নিহতের স্টুডেন্ট কার্ড (পরিচয়পত্র), ভিসা কার্ড, সানি ব্যাগ ও হাত ব্যাগসহ ছিনতাই ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সিএনজি ও চাপাতি-চাকু উদ্ধার করা হয়। দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরো জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী দলের সদস্য। দীর্ঘদিন ধরে তারা অন্য পেশার আড়ালে বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই করতো। গত ১২ ডিসেম্বর ভোরে হানিফ স্পিনিং মিলের সামনে তারা সিএনজি নিয়ে ওৎ পেতে থাকে। ভোর ৫টার দিকে তারা শিহানসহ কয়েক পথচারীকে ছুরিকাঘাত করে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে। ঘটনার পর নিহতের মোবাইল ফোনসহ ছিনতাইকৃত ৪টি মোবাইল ফোন চা-বিক্রেতা ও চোরাই মোবাইল ফোনের ব্যবসায়ী মোঃ আনোয়ার হোসেনের কাছে সাড়ে ৮হাজার টাকায় বিক্রি করে বলে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানিয়েছে। এরপ্রেক্ষিতে ঘটনার চারদিন পর চাঞ্চল্যকর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিহান হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান আমিনুল ইসলাম, কালিয়াকৈর থানার ওসি রিয়াদ মাহমুদ ও মৌচাক ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মহিদুল ইসলাম প্রমূখ।
শহীদ