ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২ পৌষ ১৪৩১

বিজয় দিবসে পর্যটন কেন্দ্রগুলো মুখরিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ২১:১০, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বিজয় দিবসে পর্যটন কেন্দ্রগুলো মুখরিত

পর্যটকের পদভারে মুখরিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত

বান্দরবানে ভ্রমণপিপাসুদের উপচেপড়া ভিড়  

১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে পর্যটকে মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড় কন্যা বান্দরবানের পর্যটন স্পটগুলো। বিজয় দিবসের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরতে এসেছে প্রচুর পরিমাণ ভ্রমণপিপাসুরা। জানা গেছে, সম্প্রতি পাহাড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চলমান বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পর্যটন ব্যবসায় ধস নামলেও বান্দরবানের হোটেল-মোটেল আর বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সমাগম হওয়ায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। এ ছাড়া শীতের আমেজের সঙ্গে পর্যটকের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠেছে পার্বত্য বান্দরবানের উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, মেঘলা, নীলাচলসহ বিভিন্ন স্পটগুলোতে অসংখ্য পর্যটক ভিড় জমাতে দেখা গেছে।
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক পারভেজ ও তার সহধর্মিণী মেহেরিমা জানান, এবারের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের ছুটি উপভোগ করার জন্য বান্দরবান ভ্রমণে এসেছি আমরা। এ জেলার সাঙ্গু নদী ও পাহাড় পর্বত দেখে মন জুড়িয়ে গেছে। আমরা দেশের অনেক ভ্রমণ করেছি। তবে একইসঙ্গে পাহাড়, নদী, মেঘের মিতালী দেখে আমাদের বার বার বান্দরবান আসতে ইচ্ছে করছে। পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর ছুটিতে পর্যটকদের আগমনে জেলার হোটেল-মোটেল, রিসোর্টগুলো কানায় কানায় পূর্ণ এখন, পর্যটকদের সেবা দিতে পেরে খুশিও ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে জেলায় প্রচুর পর্যটকের সমাগম হওয়ায় হোটেলের প্রায় ৭৫ শতাংশ বুকিং-ভাড়া হয়েছে।  
বান্দরবানের মেঘলা এলাকার হোটেল নাইট হেভেনের মালিক ইসমাইল জানান, বিজয় দিবস ছাড়াও থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে আমাদের হোটেলে অনেক রুম বুকিং হয়েছে। আগের তুলনায় প্রচুর পর্যটকের সাড়া পাচ্ছি। দীর্ঘদিন পর বান্দরবানে পর্যটকের আগমন ঘটায় আমরা খুশি বলে জানান তিনি। বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোটেল আরণ্যের মালিক বলেন, চলামান সংকট কাটিয়ে ইতোমধ্যে বান্দরবান পর্যটক আসতে শুরু করেছে। পর্যটকদের জন্য বান্দরবান হোটেল রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রতিটি হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টের মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বান্দরবান ট্যুরিস্ট পুলিশের উপ-পরিদর্শক শাহীন মিয়া জানান, বান্দরবানে সারা বছরই পর্যটকরা ভ্রমণে আসে আর তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সাদা পোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পর্যটকদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কুয়াকাটায় উৎসবমুখর পরিবেশে পর্যটকরা
ঘুরছেন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী থেকে জানান, মহান বিজয় দিবসের ছুটিতে কুয়াকাটা পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকেই সৈকতে ভিড় করেন পর্যটকরা। দুপুরে গোটা সৈকত পর্যটকে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পূর্ব পশ্চিম দুই দিকে দুই কিলোমিটার পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে থাকে। বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। আগতরা ঘুরছেন সৈকতের সৌন্দর্য্যমণ্ডিত স্পটে। রাখাইন পল্লী, কুয়াকাটার কুয়া, প্রাচীন নৌকা, শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার ঘুরে দেখছেন। কেউ বা ছুটে গেছেন সীমা বৌদ্ধ বিহার কিংবা লাল কাঁকড়ার চর গঙ্গামতি সৈকতের বেলাভূমে। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সব বয়সী হাজার হাজার মানুষ কুয়াকাটায় এসে ভিড় করেন। তারা উপভোগ্য সময় কাটাচ্ছেন। কুয়াকাটার হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ জানান, এখানকার হোটেলের অধিকাংশ কক্ষ বুকিং রয়েছে। অবস্থান নিয়েছেন পর্যটকরা। তবে পরিবহন ব্যবস্থাপনার সমস্যার সুযোগে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার অভিযোগ করেন বহু পর্যটক।
সাজেক ও রাঙ্গামাটির পর্যটন
স্পটগুলো পর্যটকে
ঠাসাঠাসি

নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি থেকে জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে রাঙ্গামাটির মেঘকন্যা হিসেবে খ্যাত সাজেকের ও রাঙ্গামাটির পর্যটক স্পটগুলোতে পর্যটকদের ঢল নেমেছে। যা চলতি শীত মৌসুমে সর্বাধিক। এই আগমন শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। সবচেয়ে বেশি পর্যটকের আগমন হয়েছে সোমবার বিজয় দিবসের দিন। ওইদিন সকাল থেকে মিনিবাস জিপ গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে প্রায় তিন হাজার পর্যটক সাজেক অবস্থান করছেন। এ ছাড়া রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, রাজবাড়ি, আরণ্যক, সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই লেক এলাকা ভরপুর হয়ে পড়েছে পর্যটকে। এসব আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট এখন হাজারো পর্যটকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে।
সাজেক রিসোর্ট মালিকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যে পরিমাণ পর্যটক সাজেকে অবস্থান করছেন- এই মৌসুমে এত বেশি আর কখনো দেখা যায়নি। সব রিসোর্ট বুকিং হয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি শহরেও সব হোটেল বুকিং হয়ে গেছে। সাজেক জিপ গাড়ি লাইনম্যান ইয়াছিন আরাফত সাংবাদিককে জানান, সকালে ছোট, বড় গাড়ি মিলিয়ে প্রায় ৩৫০টি গাড়ি সাজেকে প্রবেশ করেছে। যাতে প্রায় তিন হাজার পর্যটক হবে। বিশেষ করে ঝুলন্ত ব্রিজ, সুভলং ঝর্ণা ও কাপ্তাই লেকে পর্যটকদের পদচারণা বেশি পরিলক্ষিত হয়েছে। 

মোহাম্মদ আলী

×