ভোর বেলা ও সকাল ৯টায়। পয়লা পৌষের কনকনের শীত। হাত,পা যেন জমিয়ে দিচ্ছিল। ‘শীতের হাওয়ায় লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে...’ এমন লঘু দৃশ্যপট ঘুচে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই পৌষ এলো এবার কনকনে শীত নিয়ে। এই শীতে রূপলাবণ্যের পাশে রিক্ত প্রকৃতিকে আমরা নতুন করে আবিষ্কার করি। এক অদ্ভুত আচ্ছন্নতা ঘিরে রেখেছে। দুপুর হতে না হতে বিজয় দিবসের দিনটি ঝলমলে চড়া রোদের আগমন ঘটে। পরিবেশ দেখলে কে বলবে পহেলা পৌষ। নীলাভ আকাশের বুকভরা রুপালি তারা খচিত উজ্জ্বলতা। খালবিল নদী নালা থেকে বর্ষার পানি শুকায় গেছে। পরাণে তীব্র শিস দেয় কোনো এক আকুলতা। গ্রামীণ জনপদের আবহাওয়ার চিত্র পহেলা পৌষ ভাবিয়ে তুলেছে।
বিজয় দিবসের ছুটিতে বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা ভিড় করছে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করতে। হিমালয় পাদদেশীয় উত্তরাঞ্চলে শেষ সীমানা বাংলাবান্ধা। এক ঝাঁক পর্যটক হাজির সেখানে। চনচনা রোদে শরীরের গরম কাপড় গুলো আর রাখাই যাচ্ছেনা।
রাজশাহী থেকে আসা হাসান খান জনকন্ঠের প্রতিবেদককে বললেন, পহেলা পৌষে এলাম হিমালয়ের কনকনে শীত উপভোগ করতে। এসে পেলাম ঝলমলে রোদ্র আর পরিস্কার নীলাভ আকাশ। বাংলাবান্ধার মহানন্দা নদীর বুকে মানুষজনকে দেখছি পাথর উত্তোলন করতে। আর উত্তর পশ্চিম কোনে উঁকি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। হিমেল বাতাস শরীরে কাঁটার মতো বিঁধতে পারলো না। উল্টো গরম ধরিয়ে দিয়েছে রোদ্রের চনচনা ছটা। আহ নতুন এক অভিজ্ঞতা পেলাম জীবনের পৌষের পহেলা দিনে। আরেক পর্যটক সানাউল কুমিল্লা থেকে এসেছেন। ভোরে নেমে কনকনে শীতে তিনি কাঁপছিলেন বলে জানালেন। কিন্তু দুপুর হতে না হতে দৃশ্যপট পাল্টি গেলো। এম রোদ্রের ঝাঁঝ শরীরে গরম কাপড় আর রাখা গেলোনা। অথচ কুমিল্লা থেকে তেঁতুলিয়া আসতে পথে বৃষ্টির মতো ঝরেছে কুয়াশা।
মহানন্দায় নদী থেকে পাথর উত্তোলন কারী বেশ কয়জন শ্রমিকের মধ্যে সিপাইপড়ার জাকের হোসেন বললেন, শীত আর রোদ বলতে আমাদের কিছু নেই। কনকনে শীত ও কুয়াশায় নদী থেকে পাথর তুলতে কস্ট হয় খুব। আজ(সোমবার) পহেলা পৌষে দুপুরে যে কড়া রৌদ্র উঠেছে তাতে আজ আমরা ৫০ জন শ্রমিক অনেক বেশী পাথর উত্তোলন করতে পারছি। যা আমাদেন পরিবারের জন্য আয় উপার্জন। আরেক শ্রমিক তিরনইহাটের সাগর মিয়া জানালেন আজ কড়া রোদ্রের সাথে কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিস্কার দেখা গেলো। পাহাড়ও দেখছি পাথরও তুলছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেলো শুধু পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাবান্ধা নয়, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের তিস্তার পাড়, ঠাকুরগাঁও এর ফাঁকা এলাকায় খুব ¯পস্টভাবে দেখা দিল কাঞ্চনজঙ্ঘা।
এদিকে সৈয়দপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ লোকমান হাকিম জানান, উত্তরাঞ্চলের সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে তেঁতুলিয়ায় ৯ দশমিক ৪, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ২ ও ডিমলায় ১২ দশমিক ৫, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ৯, কুড়িগ্রামের রাজার হাটে ১১ দশমিক ৫ ও বিভাগীয় রংপুরে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এছাড়া সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, পৌষ মাসের রাতের ও ভোরের তাপমাত্রার সাথে দুপুরের তাপমাত্রার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে দিনের বেলা ঝলমলে রৌদ্র থাকলে রাতের বেলা শীত বেশী অনুভুত হতে পারে। তবে পৌষ মাঘ শীত কাল। হাড়কাঁপানো শীত চলতে পারে। আর এবার শীত অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি হতে পারে। তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে কাছাকাছি নামতে পারে।
ছবি ক্যাপসনঃ- পহেলা পৌষের মেঘ মুক্ত নীলাভ আকাশ। তখন বেলা দুটো ৩০ মিনিট। তার মাঝে উঁকি দিয়েছে হিমালয় পর্বত মালার কাঞ্চনজঙ্ঘা। দেশের সর্ব উত্তরের বাংলাবান্ধার মহানন্দা নদীর সীমান্তে শ্রমিকরা নান্দনীক প্রকৃতিতে উত্তোলন করছে পাথর- জনকন্ঠ
মোহাম্মদ আলী