ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩১

সাদুল্লাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর খাবারে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সাদুল্লাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর খাবারে অনিয়ম

.

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীর খাবার নিয়ে চলছে অনিয়ম। খোঁজ  মিলছে না খাদ্য তালিকার। চলছে মনগড়া নিম্নমানের খাবার সরবরাহ। দুপুরের রান্না করা খাবার চলছে রাতেও। এমন খাবার সরবরাহ করার অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে বিরাজ করছে চাপা ক্ষোভ।
রবিবার  দুপুরে  সরেজমিনে ওই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, রান্না করা কক্ষের প্রবেশ পথের দরজা তালাবদ্ধ। সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে চলে আসেন শামীম নামের এক ব্যক্তি। তিনি এখানে ১৩ বছর ধরে কর্মরত। খুলে দেন প্রবেশ পথের দরজা। এ সময় রান্না করা কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে চোখে পড়ে, ৪টি হা-ির মধ্যে ২টিতে ভাত, ১টিতে পেঁপে আলুর ঘাটি, ১টিতে রয়েছে ব্রয়লার মুরগির মাংস। দুপুরে খাবার পরিবেশনের পর এগুলো অবশিষ্ট রয়েছে। রাতে পরিবেশন করা হবে গরম ভাতের সঙ্গে দুপুরের রান্না করা তরকারি।  
খাবার তালিকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জানান, বিল্ডিংয়ের কাজের সময় ওসব নষ্ট হয়ে গেছে। আমাকে যা এনে দেওয়া হয় তা রান্না করে পরিবেশন করি। তিনি নিজেও জানেন না এখানে কোনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান খাদ্য সরবরাহ কাজে নিয়োজিত।  
হিরুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে জানান, মূল ঠিকাদার পাবনার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তিনি (হিরু)সহ পলাশবাড়ীর ওই ব্যক্তি সাব-ঠিকাদারের দায়িত্ব পালন করছেন। হিরু জানান, আমরা খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করে থাকি। আরএমও তার লোক দিয়ে বুঝে নেন। তারপর আর আমি জানি না।’
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, এখানে কোনো ওয়ার্ডে খাদ্য তালিকা না থাকায় তারা খাবার নিয়ে উচ্চবাচ্যও করতে পারেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাবারের সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির মাংস দেওয়া হলেও তা ছোট্ট একটি টুকরা। সরবরাহ করা মাছের পরিমাণও খুব কম। দেওয়া হয় অতি নিম্নমানের মোটা চালের ভাত। সকালে পাউরুটির সঙ্গে একটি সাগরকলা, একটি ডিম সরবরাহ করা হয়। এ রুটি এবং সাগরকলাও অতি নিম্নমানের। সব বয়সী রোগীদের জন্য একই ধরনের খাবার দেওয়া হয়, যা তাদের ফেলে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। এ ছাড়াও ডায়াবেটিকসে আক্রান্ত কোনো রোগীর জন্য লাল আটার রুটি এবং ভাত খেতে না পারা রোগীর জন্য গরুর দুধ দেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কোনোদিনই তা দেওয়া হয় না। খাবারের মান অতি নিম্নমানের। রোগীরা তো দূরের কথা, স্বজনরাও মুখে দিতে পারেন না। ফলে অনেক সময় বাহিরের খাবার খেতে হয়। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খাবার পরিবেশনকারীরা নোংরা পাত্রে কিছু ভাত ও একটি বাটিতে সামান্য তরকারি এনে ওয়ার্ডের একপাশে দাঁড়ান। সেখান থেকে সবাইকে নিজ নিজ থালা-বাটিতে করে খাবার নিয়ে যেতে বলেন। দুস্থদের রিলিফ নেওয়ার মতো করে রোগীর স্বজনরা তাদের কথামতো খাবার সংগ্রহ করেন। এটা খুবই অপমানজনক।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুরঞ্জন কুমার জানান, দুপুরের রান্না করা খাবার রাতে গরম করে দেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। নিম্নমানের খাবার বিষয়ে জানান, বাজারে মাছ, মাংস, সবজির দাম বেশি হওয়ায় ঠিকাদার এভাবে খাদ্য সরবরাহ করছেন। খাদ্য তালিকার বিষয়ে জানান, বিল্ডিংয়ের কাজের সময় তালিকাটি নষ্ট হয়ে গেছে। তালিকা ছাড়া কিভাবে নিত্যদিনের খাবার সরবরাহ ও পরিবেশন করা হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান এই আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সুরঞ্জন কুমার।
গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. কানিজ সাবিহা এর সঙ্গে কথা হলে  জানান, ওয়ার্ডে খাদ্য সরবরাহের তালিকা ঝুলানো না থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে। আর রোগীদের মাঝে উন্নতমানের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেব। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরে এর বিরুদ্ধে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

×