সফল শিল্পো উদ্যক্তা
বা-হাাতের অর্থডক্স স্পিন আার ব্যাটিংয়ে দলকে বহুবার জিতিয়েছেন। এবার শিল্পো উদ্যোক্তা হিসাবেও সফল হয়েছেন সৈয়দপুরের সাবেক সব্যসাচী ক্রিকেটার হুমায়ুন কবীর। তার উৎপাদনমুখী শিল্পের সাথে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশীয় শিল্প বিকাশেও রাখছেন অবদান।
শহরের পৌর ১১ নং ওয়ার্ডের নতুন বাবু পাড়ার কলিম মোড়ের এ বাসিন্দা খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেন আশির দশকে এ জনপদের বনেদী ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাবে। বাড়ির পাশে শহরের রেলওয়ে মাঠে সকাল-বিকাল অনুশীলনে নিজেকে শানিয়ে তোলেন।
বাহাতি স্পিনের ঘুর্নী আর মারকুটে ব্যাটিংয়ের কারণে স্কুল ক্রিকেটে প্রতিশ্রিুতিশীল খেলোয়াড় হিসাবে নজরে আসেন। স্কুল থেকে ক্লাব পাড়ার কোচের প্রথম পছন্দের খেলোয়াড় হিসাবে তালিকায় থাকতেন। ১৯৯৩ সালে এএসসি পাশের পর ঢাকার ক্লাবে খেলার আশায় কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যান।
পরিশ্রমের ফল স্বরুপ সুযোগ পান নীলফামারী জেলা দল ও ফাস্ট ক্লাস ও লিস্ট-এ ক্রিকেট দল রাজশাহী বিভাগের হয়ে। সেখানে ২০০০ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত খেলেন বাহাতি এ ওপেনার হুমাযুন কবীর।প্রথম শ্রেণীর ২৫ ম্যাচে ৯২৯ রান ও লিস্ট-এ ১৬ ম্যাচে করেন ১৯৭ রান। দুই ধরনের ক্রিকেটে হাত ঘুরিয়ে উইকেট পান ১৮ টি। ঢাকার দ্বিতীয়, প্রথম ও প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন দলে প্রায় ১৬ বছর খেলে যান। কাঠাল বাগান, উত্তরা, যাত্রাবাড়ি, ওয়ারি থেকে প্রিমিয়ার লীগে ইন্দিরা রোড, বাংলাদেশ বিমান, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, কলাবাগানসহ বিভিন্ন ক্লাবে খেলেন।
জাতীয় নির্বাচকদের নজরে পড়লে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ জাতীয় এ দলের ডাক পেয়ে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান সফর করেন। দুই দেশের দুই ভেন্যুতে দুটি পঞ্চাশর্ধ রানের ইনিংস খেলেন। জাতীয় লীগে বরিশাল ফরচুনের পৃস্টপোষকতা করেন। সাথে হাল ধরেন প্রিমিয়ার লীগে ধুকতে থাকা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্রিকেট দলের। নিজ জেলা নীলফামারীর ক্রিকেট ওয়েল ফেয়ারের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ক্রিকেটার তৈরীর আতুরঘর ন্যাশনাল ক্রিকেট একাডেমি গড়েন।
সেই একডেমিতেই ক্রিকেটের হাতেখড়ি হয় নারী ক্রিকেটার মারুফার। যিনি এখন এখন বাংলাদেশ নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের অপরিহার্য এক ক্রিকেটার। এছাড়া এ নীলফামারীর জেলা বয়স ভিক্তিক দল, দুরনন্ত রাজশাহী দলের উপদেস্টা ও সৈয়দপুরে চলমানএসপিএল সিজন-২ এর পৃস্টপোষকতাসহ উত্তররের জনপদে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আয়োজনেও ব্যাপক ভুমিকা রাখছেন। ভাবনায় তার কেবল তরুনদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মেধাবী ক্রিকেটার উঠে আনা। যারা এ জনপদের সুনাম কুড়িয়ে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে যাতে ভুমিকা রাখতে পারে। তৈরী করবে আধুনিক ক্রিকেটাের নতুন গতিপথ। বর্তমানে ফারুক আহমেদ স্বরনি নিকুঞ্জ-২ খিলখেতের প্রধান কার্যালয় থেকে পরিচালনা করছেন উতপাদনমুখী ব্যাবসা। আর পরিবার নিয়ে ওল্ড ডি এইচ এসে স্থায়ী বসত গড়েছেন।
বাবা মো: হারুন অর রশিদসহ মা, ৫ বোন, স্বজন ও এলাকার ক্রিকেটের খবর নিতে শত ব্যাস্ততায় প্রায় ছুটে আসেন নিজ বাসভুমে। তার পণ্য বাজারজাতে ৬৪ জেলায় ডিলারের মাধ্যমে কয়েকহাজার শিক্ষিত তরুন কাজ করছে। অবদান রাখছে পরিবারে। এছাড়া ব্যাবসার পাশাপাশি নিভৃতে চালিয়ে যাচ্ছেন সমাজ সেবামুলক কর্মকাণ্ড। মহামারী করোনায় বিধিনিষেধ মানা আবদ্ধ হাজার হাজার মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ,শিক্ষা, চিকিৎসা, বিয়ে ও অন্যন্য প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডে অসহায়দের গোপনে সহায়তাকারী হিসাবে ব্যাপক পরিচিতি তার।
এ জনপদের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক উইকেট কিপার মুখতার সিদ্দিকী বলেন, মহান রাব্বুল আলামীন তাকে সামর্থ্য দান করেছেন। যা মানবকল্যানে ব্যায় করছেন। এর সাথে ২২ গজের মোহ এখনও ছাড়তে পারেননি। সুযোগ পেলেই ব্যাট হাতে ছুটে যান ক্রিকেট মাঠে। এখনও তিনি কর্পোরেট লীগে বিভিন্ন দলের সাথে চুক্তিতে খেলছেন।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর ) তার বাস ভবনে জনকণ্ঠ এর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় সফল ক্রিকেটার ও শিল্পোদ্যক্তা হওয়ার গল্প শোনান। হুমায়ুন বলেন, ২০০৭ সালে জাতীয় ক্লাব কাপ ক্রিকেটে নিজের ন্যাশনাল ক্রিকেট ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করি। অলরাউন্ডিং পারফর্মেন্সের কারণে ওই টুর্ণামেন্টের ফাইনালে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ নির্বাচিত হয়েছিলাম। তবে ইংল্যান্ডের মাইনর ক্রিকেট লীগে দুই বছর খেলার পর উৎপাদনমুখী ব্যাবসায় ঝুকে পড়েন এ ক্রিকেটার। ক্রিকেটার বন্ধু মোশাররফ হোসেন রুবেলকে সাথে নিয়ে ঢাকার বিসিকে সামান্য জায়গায় গড়েন এটলাস টয়লেট্রিজের কারখানা। সেখানে ডিটারজেন্ট, কয়েল, স্যানিটাইজার, ডিসবার, হ্যান্ডওয়াশ, এন্টিসেপটিকসহ ২৯ টি পণ্য দেশের বাজারে ব্যাপক সুনাম তৈরী করে। বৃদ্ধি পায় ব্যাবসার পরিসর। শিল্পো কারখানাটি বিসিক থেকে স্থানান্তর করেন নারায়নগঞ্জ রুপগঞ্জের মফস্বলে মাসুমাবাদের হাটাব হান্ডিয়াল এলাকায়। সেখানে ৪ বিঘা জমির উপর নির্মাণ করেন কারখানা। এর অভ্যন্তরে ল্যাব, আধুনিক মেশিন, কনফারেন্স কক্ষসহ সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় তৈরী হয় পণ্য।
শুধু তাই নয়, তার ম্যানুফ্যাকচারিংয়ে সন্তোষ্ট হয়ে দেশের স্বনামধন্য কোহিনুর কেমিক্যাল, স্কয়ার টয়লেট্রিজসহ ৫ কোম্পানির পণ্য চুক্তিতে তৈরি করেন। তার উৎপাদিত পণ্য দেশের ৫০টি জেলায় ডিলারের মাধ্যমে বাজারজাত হচ্ছে।
এ নিয়ে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি মো: নুর-ই- আলম সিদ্দিকী বলেন, হুমায়ুনের মত শিল্পো উদ্যক্তা ও পৃষ্টপোষক খুবই দরকার। তাহলে পরিকল্পিত ভাবে এ জনপদসহ দেশের ক্রীড়াঙ্গনে প্রতিযোগিতার আয়োজন সম্ভব হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতীক উন্নয়নে অবদান রাখছে।
শহীদ