চর জমিতে নানা জাতের শীতকালীন শাক - সবজির আবাদ হয়েছে।
ফটিকছড়িতে ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী সময়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় হালদা, ধুরুং ও সর্তাখালসহ অন্যান্য খালের দুই পাড়ের বিস্তীর্ণ চর জমিতে নানা জাতের শীতকালীন শাক-সবজির আবাদ হয়েছে।
ইতিমধ্যে সেসব সবজি বাজারে তুলতে শুরু করছে উপজেলার চর অঞ্চলের চাষীরা। গত বছরের তুলনায় এবছর সবজির আবাদও বেড়েছে। এবার এসব জমিতে সবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা গত বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ফটিকছড়িতে হালদার চর,ধুরুং চর, সত্তার চর,যতির চর, নলুয়ার চর ও আন্দার মানিক চরসহ মোট চরাঞ্চলের পরিমাণ ২ হাজার ১৪৯ হেক্টর। এর মধ্যে ২ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে এবার শীতকালীন নানা সবজি আবাদ হয়েছে। মোট পতিত জমি রয়েছে ২২৫ হেক্টর। এসব চরাঞ্চলে এবার ১৩ হাজার ৮৬৯ মেট্রিকটন শীতকালীন সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসাব অনুযায়ী প্রতি হেক্টরে প্রায় ১২ মেট্রিক টন সবজি উৎপন্ন হবে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভা এবং সুন্দরপুর ইউনিয়ন,পাইন্দং ইউনিয়ন,কাঞ্চন নগর ইউনিয়ন,দৌলতপুর ইউনিয়ন, সুয়াবিল ইউনিয়ন, হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন,ভূুজপুর ইউনিয়ন ও নারায়নহাট ইউনিয়নের চরাঞ্চল যেন সবুজ গালিচায় ঢেকে গেছে। শীতকালীন সবজির বর্ণিল সবুজে ভরে উঠেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। শোভা পাচ্ছে নানা ধরনের শীতকালীন সবজি। এরই মধ্যে রয়েছে বেগুন, মুলা,ভান্ডারী মুলা, সিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁচা মরিচ, লালশাক, মিষ্টি কুমড়া,মিষ্টি আলু,আলু,শসাসহ নানা জাতের বিভিন্ন সবজি। এরই মধ্যে কৃষকরা বেগুন, মুলা, সিম, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি,লালশাক ও শসা বাজারে তুলতে শুরু করেছেন।
এসব চরে উৎপাদিত সবজি স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে পাইকাররা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন সারাদেশে। দেশেজুড়ে খ্যাতি রয়েছে এসব চরে উৎপাদিত বেগুন, মুলা, শিমসহ হরেক রকমের সবজির। অনুকূল আবহওয়া, আধুনিক প্রযুক্তি,সময়োপযোগী কৃষি নীতি ও কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলতি বছর বেশ ভালো পরিমাণে সবজি উৎপন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সুন্দরপুর পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের সবজিচাষি মুহাম্মদ এজেহার (৩২) জানান, নদীর তীরে বছর বছর পলি জমায় এখানকার জমিতে সবজির ফলন ভালো হয়। তবে এবারের বন্যায় ফলন নিয়ে কিছুটা শঙ্খায় ছিলেন চাষীরা। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও ফলন ভালো হয়েছে। ক্ষেত দেখে বুঝার উপায় নাই, যে কয়েক মাস আগে ফটিকছড়ি বন্যা কবলিত ছিল।
সুয়াবিল গ্রামের সবজিচাষি মুহাম্মদ আমান উল্লাহ (৪২) বলেন, খালের পাড় গুলোতে শাক-সবজি চাষ বরাবরই ভলো হয়। সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা লাগে কম। আবার সেচ সুবিধা থাকায় জমিতে প্রয়োজন মতো পানিও দেওয়া যায়। আর বন্যা বা পাহাড়ি ঢলের পানিতে এসব জমিতে পলি থাকায় ফলনও ভালো হয়। সরকার থেকে উন্নত বীজ সুবিধা, পোকা-মাকড় ও রোগ বালাই রোধে প্রয়োজনীয় সরকারি সুবিধা পেলে উৎপাদনও বাড়ানো যাবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: হাসানুজ্জামান বলেন, বহু বছর ধরে এ অঞ্চলের খালের পাড়ে প্রায় ৩ হাজার ২৬৫ জন মানুষ বসবাস করে।বসবাসকারী কৃষকেরা সবজির আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। এখন বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল সবজির আবাদ হচ্ছে এসব চর এলাকায়। চরাঞ্চলে বসবাসকারী এসব মানুষের আরো বেশি কৃষি মুখি করা গেলে সবজি উৎপাদনে ফটিকছড়ি উপজেলা হবে একটি রুল মডেল।
তিনি বলেন- এক্ষেত্রে অবশ্য কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। তারমধ্যে, বিদ্যুৎ সুবিধা না থাকা,কিছু অসাধু ব্যক্তির দ্বারা এসব চরাঞ্চল অবৈধ বালু ও মাটি বিক্রির কারণে ক্ষতিসাধনসহ নানা জটিলতা দেখা দিয়েছে।
রিয়াদ