.
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বেপরোয়াভাবে অবৈধ পথে ঢুকছে মাদকদ্রব্য ও বার্মিজ গরু-মহিষ। উপজেলার সদর ইউনিয়নের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা মেহেরপুর সড়ক, হামিদিয়াপাড়া সড়ক, দক্ষিণ মৌলভীরকাটা সড়ক, নিকুছড়ি এবং সোনাইছড়ি সড়কসহ কিছু সড়ক ব্যবহার করে চোরাকারবারিরা কয়েক হাজার গরু মহিষ প্রবেশ করেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে।
সরেজমিনে জানা যায়, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অবৈধ পথ দিয়ে শত শত গরু-মহিষ, ইয়াবাসহ অবৈধ মাদকদ্রব্য আসছে। মিয়ানমার থেকে সীমান্ত দিয়ে চাকঢোল বাজার পার্শ্ববর্তী কক্সবাজারের রামু উপজেলার গর্জনিয়া বাজারে এনে বিক্রি করে চোরাকারবারিরা। এছাড়াও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৪৩ পিলার থেকে ৫০ নম্বর পিলার পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গোপন পথগুলো দিয়ে মিয়ানমার থেকে ইয়াবাসহ অবৈধ মাদকদ্রব্য দেশের অভ্যন্তরে এনে বিক্রি করছে তারা। সীমান্তবর্তী চাকঢালা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে অবৈধ পথে আসা গরু-মহিষ বৈধতা দিচ্ছে বাজার ইজারাদাররা। প্রতিটি গরুর জন্য দেওয়া হচ্ছে একটি করে রশিদ, ইজারাদারদের দেওয়া সেই বৈধতার রশিদ মেনে নিচ্ছে প্রশাসন। ইজারাদারদের দেওয়া সেই রশিদ নিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি জোন (ব্যাটালিয়ন), নাইক্ষ্যংছড়ি থানা এবং নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়ে ট্রাকে ট্রাকে গরু-মহিষ নিয়ে যাচ্ছে চোরাকারবারি চক্রগুলো। স্থানীয়রা জানায়, গরু-মহিষের পাশাপাশি ঘুমধুম ইউপি ও সদর ইউপির সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মরণব্যাধি মাদক ইয়াবা, ক্রিস্টাল মেথ আইস ও বার্মিজ স্বর্ণ। তবে সীমান্তে বিজিবি কঠোর অবস্থানে থাকলেও স্থানীয়দের সহযোগিতায় চোরাকারবারিরা বিজিবির চোখ এড়িয়ে এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দিনরাত। এদিকে, সীমান্তের গোপন পথগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে সার, কীটনাশক, ওষুধ, চাল, অকটেন, সয়াবিন তেল, মুরগি, ডিম, মাছ, বিস্কুটসহ ৩০ থেকে ৪০ প্রকারের বাংলাদেশী পণ্য। তবে এসব চোরাচালানে চিহ্নিত কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীরাও জড়িত রয়েছে।
চাকঢোলা বাজার ব্যবসায়ী শামশুর আলম, ছৈয়দ আলম ও ছব্বির আহমদ জানান, সীমান্তে বিজিবির অস্থায়ী তল্লাশি ক্যাম্প বসিয়ে নজরদারি বাড়ালে চোরা কারবার কিছুটা বন্ধ হবে, তাতেও যদি না হয় বিজিবি, পুলিশ, গোয়েন্দা, আনসার, স্থানীয়দের সমন্বয়ে তদারকিসহ তল্লাশি চৌকি বসালে এক সপ্তাহের মধ্যে এসব চোরা কারবার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, মিয়ানমার থেকে গরু মহিষ ছাড়াও প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাদকদ্র্রব্যসহ অবৈধ মালামাল আসছে দেশে। এসব অবৈধ পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপির মেহেরপুর সড়ক, হামিদিয়া পাড়া সড়ক, দক্ষিণ মৌলভীরকাটা সড়ক, নিকুছড়ি হয়ে সোনাইছড়ি সড়ক, আলী মেম্বার-অইক্যের ঘোনা সড়ক হয়ে লাইটে গোড়া সড়ক, মৌলভীকাটা রাবার ড্যাম-ভামো ও শামশুর ঘোনা হয়ে ছালামীপাড়া খামারপাড়া অংকপাড়া হয়ে লাইটের গোড়া সড়ক। ঘুমধুম ইউনিয়নের বাইশপাড়ি, তুমব্রু লামার পাড়া জলপাই তলি সীমান্ত দিয়ে। এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবির জোন কমান্ডার লে. কর্নেল সাহল অহমদ নোবেল জানান, চোরাকারবারিরা দেশের শক্র-জাতির শত্রু। তাদের কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের সীমান্তরক্ষী বিজিবি সদস্যরা কঠোর অবস্থানে আছে এবং অভিযান চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।