.
২৩ মিটারের নির্মাণাধীন একটি সেতুর জন্য বিকল্প রাস্তায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সেতু নির্মাণ কাজ শুরুর চার বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে এলাকাবাসীর চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) জেলার গৌরনদী উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ইল্লা বাসস্ট্যান্ড থেকে তুলাতলা বাজারে যাওয়ার জন্য খালের ওপর ২৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরসিসি গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২০২১ সালের ১১ এপ্রিল মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২ কোটি ৭৩ লাখ ৫১ হাজার ১৯৯ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালের শেষের দিকে এসে এখনো শেষ হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের অধীনে গৌরনদী উপজেলায় আরও ১৬টি সেতু র্নিমাণ কাজ এখনো চলমান রয়েছে। যার একটিও নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। সরেজমিনে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কাজ শুরুর কয়েক মাসের মধ্যে ২০২১ সালের শেষের দিকে ইল্লা বাসস্ট্যান্ড থেকে তুলাতলা বাজারে যেতে খালের ওপর আরসিসি গার্ডার সেতুটির নির্মাণকাজ ৭০ ভাগ শেষ করে কাজ বন্ধ রাখে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে অতিসম্প্রতি সেতুটির কাজ তড়িঘড়ি করে সম্পন্ন করতে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে আবারও কাজ শুরু করা হয়।
এ সময় বিকল্প চলাচলের বাইপাস সড়কটির (সংযোগ সড়ক) মাটি ভেকু মেশিন দিয়ে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজে লাগাচ্ছে ঠিকাদার। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে বাইপাস সড়ক না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ওই এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীসহ কয়েক হাজার এলাকাবাসী। স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ সরদার অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মালিকানাধীন রেকর্ডীয় প্রায় চার শতক জমির মধ্যে জোরপূর্বক সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এ সময় বাধা প্রদান করা হলেও ঠিকাদারের লোকজন বাধা উপেক্ষা করে নির্মাণ কাজ শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দা রশিদ হাওলাদার জানান, সেতু নির্মাণের জন্য আমার জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
সুরুজ মিয়া বলেন, এতদিন সেতুর কাজ বন্ধ থাকলেও অন্তত সংযোগ সড়ক দিয়ে কোনোভাবে হেঁটে পার হওয়া যেত কিন্তু এখন কাজ শুরুর পর না আছে বাইপাস সড়ক, না আছে অ্যাপ্রোচ সড়ক। এতে করে সেতুটি দিয়ে যানবাহন চলাচল ও সাধারণ জনগণের পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ২৩ মিটারের এই সেতু পার হতে এখন বিকল্প রাস্তায় প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিতে হচ্ছে।
খালের পাড় ভাঙা ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে সেতু নির্মাণে বিলম্ব হয়েছে দাবি করে মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজের প্রকল্প পরিচালক কাইউম খান বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধুমাত্র অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে যা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হবে। মালিকানা জমিতে জোরপূর্বক সেতু নির্মাণের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমরা পূর্বের সেতু ভেঙে খাল বরাবর নতুন করে কাজ শুরু করেছি।
গৌরনদী এলজিইডি প্রকৌশলী অহিদুর রহমান বলেন, ব্যক্তি মালিকানা কিংবা সরকারি খাস জমিতে সেতু নির্মাণ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নির্মাণ কাজে বিলম্ব হলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। মালিকানা জমিতে জোরপূর্বক সেতু নির্মাণ করার অভিযোগ প্রসঙ্গে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আবদুল্লাহ খান বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।