ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে নেত্রকোনায় শোকের ছায়া

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা

প্রকাশিত: ১৯:২৫, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৯:৩৭, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে নেত্রকোনায় শোকের ছায়া

কবি হেলাল হাফিজ

প্রেম ও দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজের মৃত্যুতে নেত্রকোনার সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার(১৩ডিসেম্বর) দুপুরে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নানান স্মৃতিচারণ করে কবিকে স্মরণ করছেন তাঁর নেত্রকোনার স্বজন, সহপাঠী ও অগণিত ভক্তরা।    

আজীবন বোহেমিয়ান কবি হেলাল হাফিজের জন্ম ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে। তাঁর শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্য কেটেছে নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ায়।

 ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা শহরের দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেই যে রাজধানীবাসী হন, আর ফেরেননি। নেত্রকোনারই এক নারীর সঙ্গে কৈশোরকাল থেকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল কবির। কিন্তু সবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, ঠিক তখন ওই নারীকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তার মা-বাবা। এ কারণে আজীবন এক বিরহ-যন্ত্রণাকে লালন করে বেঁচেছিলেন কবি। আর তা দিয়ে বুনন করে গেছেন অনন্য সব কবিতা। চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ তার কাছে ছিল নিতান্ত তুচ্ছ। এসব কারণে জন্মভূমি নেত্রকোনার প্রতিও ছিল তাঁর এক ধরনের প্রচ্ছন্ন অভিমান।

গত ৫০ বছরে মাত্র তিনবার নেত্রকোনায় আসেন কবি। সর্বশেষ আসেন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত নেত্রকোনার বসন্তকালীন সাহিত্য উৎসবে, খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার গ্রহণ করতে। তা-ও স্থানীয় ভক্ত, সহপাঠী এবং স্বজনদের বিশেষ পীড়াপীড়িতে।

 নেত্রকোনায় না এলেও নেত্রকোনাকে বোনের মতো ভালোবাসতেন কবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে অনেকের কাছ থেকে নিতেন খোঁজখবর। নেত্রকোনার কেউ সুপার হোস্টেলে গিয়ে দেখা করলে আপ্লুত হতেন আবেগে। কবিতায় তিনি নেত্রকোনাকে স্মরণ করেছেন এভাবে- ‘কতো দিন তোমাকে দেখি না/ তুমি ভালো আছো?/ সুখে আছো?/ বোন নেত্রকোনা।--’

শুক্রবার দুপুরে কবির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পরার পর নেত্রকোনার সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এক ধরনের শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই দেখা গেছে কবির নানান স্মৃতি হাতড়াতে। এমনই একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী। যৌবনে কবির ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন তিনি। বলেন, ‘ঊনসত্তরের গণঅভ্যত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত কবির নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় (এখন যৌবন যার) কবিতাটি বিভিন্ন সময়ের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে আমাদের ব্যাপক অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।’

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, ‘হেলাল ভাইয়ের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িত। তাঁর মৃত্যুর খবরটি পাওয়ার পর থেকে সেসব স্মৃতি খুব মনে পড়ছে।’ উদীচীর স্থানীয় জেলা সংসদের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘হেলাল হাফিজ বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম। আর তাঁর জন্ম আমাদের নেত্রকোনা জেলায়। এ কারণে আমরা নেত্রকোনাবাসী হিসেবে সবসময় গর্ব অনুভব করি। বিশ্বাস করি, অনন্য সৃষ্টিশৈলীর কারণে ভক্তদের মাঝে তিনি বহুকাল বেঁচে থাকবেন।

সাইদুর

×