ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড পূর্বচর উমেদ এলাকার বাসিন্ধা মো. হোসেন। নিজ বাড়ির আঙিনায় গত চার বছর ধরে চাষ করছেন বরই। বিগত বছরগুলোতে বরই চাষ করে আশানূরূপ সফলতা পাওয়ায় এবার বৃদ্ধি করেছেন জমির পরিমাণও। এ বছর ১৫০ শতাংশ জমিতে বরই চাষ করেছেন হোসেন। তার বরই বাগানে এখন থোঁকায় থোঁকায় ঝুলছে বরই। তার বাগানের রয়েছে চায়না টক-মিষ্টি, বল সুন্দরী এবং আপেল কুল জাতের বরই। এ বছর বরই বিক্রি শেষ করা পর্যন্ত খরচ হবে ৪ লাখ টাকার মতো আর বাগান থেকে অন্তত ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন চাষি মো. হোসেন।
তিনি জানান, গত ৩ বছর ১০০ শতাংশ জমিতে বরইয়ের চাষ করেছিলাম। বিগত বছরগুলোতে সন্তোষজনক ফলন পেয়েছি। তাই এ বছর জমির পরিমাণ আরো ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। এবার মোট ১৫০ শতাংশ জমিতে বরই চাষ করেছি। গাছগুলোতে ভালো ফলন রয়েছে। এরইমধ্যে চায়না টক-মিষ্টি জাতের বরই ছিঁড়ে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রি শুরু করেছি। অন্য জাতের বরইগুলো চলতি মাসের শেষের দিকে ছেঁড়া শুরু করবো। আগামী মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাগান থেকে বরই বিক্রি করতে পারবো। যেহেতু বাগানে ফলন ভালো রয়েছে, তাই আশা করছি এই মৌসুমে আল্লাহর রহমতে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো। ফরমালিনমুক্ত ও টাঁটকা বরই পেতে যে কেউ আমার বাগান থেকে এসেই বরই কিনতে পারবেন।
বরই চাষি হোসেন আরো জানান, শ্রমিক, কীটনাশক, সার, জাল এবং পরিবহণ খরচসহ এবার বরই বিক্রি শেষ করা পর্যন্ত আমার ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকার মতো। কেউ যদি নতুন করে বরই চাষ করতে চায় তাহলে আমি তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো। আমি চাই; আমার এলাকাসহ এই জেলার সকল মানুষ যেন ফরমালিনমুক্ত এবং টাঁটকা বরই খেতে পারেন। যার মাধ্যমে সকলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন।
এদিকে চাষি হোসেনের বরই বাগানে বর্তমানে পাঁচজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। তারা সন্তোষজনক পারিশ্রমিক পেয়ে স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাচ্ছেন। ওই বরই বাগানের শ্রমিক মো. কবির, মো. তৈয়ব ও মো. আশরাফ আলী বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরেই হোসেন মিয়ার বরই বাগানে কাজ করছি। তিনি আমাদের নিয়মিত সঠিক পারিশ্রমিক দিচ্ছেন। যা দিয়ে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে সুন্দরভাবে দিন পার করছি।
অপরদিকে বরই চাষি হোসেনের সফলতায় এরইমধ্যে নতুন করে বরই চাষের স্বপ্ন বুনছেন স্থানীয় অনেকে। মো. মাকসুদুর রহমান, মো. নূরে আলম ও মো. নোমান নামে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বরই চাষ করে হোসেন মিয়া বেশ ভালোই সফলতা পেয়েছেন। তাই আমরাও এরইমধ্যে নতুন করে বরই চাষের কথা ভাবছি। খুব শিগগিরই বরই চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, মো. হোসেন মিয়া একজন সফল কৃষি উদ্যেক্তা। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে বরই তাকে আমরা নিয়মিত প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সহযোগিতা প্রদান করে তার পাশে থাকার চেষ্টা করছি। তিনি বরই চাষ করে ভালো লাভবান হচ্ছেন। ওনার দেখাদেখি আশেপাশের অনেক কৃষক বরই চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এবং নতুন নতুন বরই বাগান করছেন। নতুন করে যারা বরই বাগান করতে আগ্রহী হবেন আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদেরকেও প্রয়োজনীয় পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতা করবো।
মোহাম্মদ আলী