১৩ ডিসেম্বর-সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙনের পর এবার অবাধে মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে হালদা নদী। বালি উত্তোলন ও হালদার পাড় কেটে মাটির ব্যবসা বেড়েছে। প্রায় সময় হালদার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে বালি ও মাটি। প্রভাবশালীরা মিলে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার অভিযান পরিচালনা করা হলেও থামানো যাচ্ছে না সিন্ডিকেটকে।
দেশের প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী থেকে বছরে সরকারের আয় হয় কোটি কোটি টাকা। বেড়েছে স্থানীয়দের কর্মসংস্থানও। হাই কোর্টের নির্দেশে হালদা নদীর সব বালিমহাল ইজারা প্রদান, বালি ও মাটি তোলা, চর কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। কিন্তু এই বিধিনিষেধ অমান্য করে ফটিকছড়ি ও ভূজপুর এলাকার প্রভাবশালীরা নির্বিচারে বালি ও মাটি উত্তোলন করছে। তবে প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার পর কিছুদিন কাজ বন্ধ রেখে আবারও বালি ও মাটি উত্তোলন শুরু করে মাটি–বালিখেকোরা। দিন–রাত চলছে উত্তোলন।
সোমবার দুপুরে ফটিকছড়ির নাজিরহাট পৌরসভার ভাঙা দিঘির পাড় (বণিক পাড়া) সংলগ্ন হালদা নদীর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, এস্কেভেটর দিয়ে নদীর পাড়ের বালি এবং মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। কয়েক দিন ধরে চলছে এই কাজ। জানা গেছে, দিনভর মাটি ও বালি কাটার পর রাতে এগুলো রাস্তা ও ফসলি জমি ভরাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।
সাম্প্রতিক বন্যায় হালদার অনেকগুলো পয়েন্টে ভেঙে গেছে। এর মধ্যে বড় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে এই পয়েন্টে। স্থানীয়রা বলছেন, বন্যায় ২০–২৫ স্থানে হালদার পাড় ভেঙে মানুষের বাড়িঘর ধসে পড়েছে। মাটি ও বালি কাটার সিন্ডিকেট পুরো পাড় কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে হালদা নদী ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে। নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে। মা মাছের ক্ষতি হচ্ছে। হালদার পাড় থেকে যখন মাটি কাটা হয়, তখন হালদার যে আকৃতি আছে সেটি পরিবর্তন হয়ে যায়। নদীর যে প্রবাহ আছে সেটি সবদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড যে প্রকল্প হাতে নিয়েছে সেটি ভেস্তে যাবে। কোটি কোটি টাকা নষ্ট হবে। এলাকার ফসল, বসতবাড়ি ক্ষতির মুখে পড়বে। এলাকাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব সিন্ডিকেট রুখে দিতে হবে। এখানে প্রশাসনের আন্তরিকতা ও কঠোরতা জরুরি। আমি আজকেও জেলার মিটিংয়ে বিষয়ে কথা বলেছি। উপজেলা প্রশাসনকেও এ বিষয়ে জানানো হবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বালি ও মাটি কাটা প্রতিরোধে উপজেলা প্রশাসন কঠোর অবস্থানে। যেসব পয়েন্ট থেকে বালি উত্তোলন ও মাটি কাটা হয় সেখানে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে। মাটি ও বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান আছে। যেখানেই এসব কার্যক্রম চলবে অভিযানে জেল ও জরিমানা করা হবে।
জাফরান