আজ ১৩ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক নীলফামারী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে উদিত হয়েছিল স্বাধীনতার প্রথম সূর্য। সেদিন ৬ নম্বর সেক্টরের সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ও উচ্ছ্বসিত জনতা লাল-সবুজের পতাকা হাতে নিয়ে শহরে প্রবেশ করে।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে নীলফামারী জেলার (তৎকালীন মহুকুমা) স্বাধীনতাকামী জনগণের রয়েছে অভাবনীয় বীরত্বগাঁথা।পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ব্যাপক অত্যাচার নিপীড়ন ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল নীলফামারী মহকুমা জুড়ে। নীলফামারী সরকারি কলেজ, কলেজ ছাত্রাবাস ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে গড়ে তোলেন সেনা ক্যাম্পের শক্ত ঘাঁটি। বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী পুরুষদের ধরে ঘাঁটিগুলোতে করা হতো নির্মম নির্যাতন ও ধর্ষণ। অনেককে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধচলাকালিন ক্যাপ্টেন বাসার (সদর), বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন (সদর), আহমেদুল হক প্রধান (ডোমার),মোজাম্মেল হক (ডোমার), শহীদ জাহেরুল ইসলাম চিলাহাটি (ডোমার), শহীদ আঞ্জারুল হক ধীরাজ চিকন মাটি (ডোমার), শহীদ মিজানুর রহমান চিকন মাটি (ডোমার), শহীদ বাবু সুভাষ সিংহ (ডিমলা), শহীদ সামসুল কিবরিয়া খগাখড়িবাড়ী (ডিমলা), শহীদ ধীরেন্দ্র নাথ রায় পূর্ব বালাগ্রাম (জলঢাকা), শহীদ আমজাদ মিস্ত্রী চাঁদখানা (কিশোরীগঞ্জ), শহীদ আব্দুর রশিদ মাগুড়া (কিশোরীগঞ্জ), শহীদ আব্দুল বারেক মাগুড়া (কিশোরীগঞ্জ), শহীদ শাহবুদ্দিন সিট রাজিব (কিশোরীগঞ্জ), শহীদ আব্দুল মজিদ কাশিরাম বেলপুকুর (সৈয়দপুর), শহীদ জয়নাল আবেদীন বোতলাগাড়ী (সৈয়দপুর), শহীদ মির্জা হাবিবুর রহমান বেগ ঘুঘুমারী (জলঢাকা) শহীদ হন।এ ছাড়া বহু শহীদের রক্তে রঞ্জিত জেলার অসংখ্য বধ্যভূমি।
নীলফামারী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক জবা জানান,১৯৭১ সালে ছাত্র-জনতা ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তির সংগ্রামে। শুরুতে মিটিং-মিছিল আর সভা সমাবেশের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে দেশ মাতৃকার আন্দোলন। নীলফামারী মহকুমা শহরের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র এনে বড়মাঠে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। এরপর ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছয় নম্বর সেক্টরের অধীনে অস্ত্র হাতে যোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে। গেরিলা আক্রমণ আর সম্মুখ যুদ্ধে জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা মুক্ত করে ১২ ডিসেম্বর রাতে তারা এগিয়ে আসেন নীলফামারী শহরের দিকে। রাতভর প্রবল আক্রমণে নীলফামারী শহরের বিভিন্ন ক্যা¤েপ পাক হানাদার বাহিনী ও তার দোসররা ভীত হয়ে পিছু হটতে হটতে সৈয়দপুর সেনা ব্যারাকে ফিরে যায়। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার মুক্ত হয় নীলফামারী। মুক্তিযোদ্ধারা ৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর সকালে সমবেতভাবে বিভিন্ন দিক দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে শুরু করে চৌরাঙ্গী মোড়ে সমবেত হয়। সেখানে নীলফামারীকে মুক্ত ঘোষণা করে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকা ওড়ানো হয়েছিল।
এদিকে নানা আয়োজনে নীলফামারী হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হচ্ছে। দিবস উপলে আজ শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পতাকা উত্তোলন, বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শোভাযাত্রাটি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তিযোদ্ধা কার্যালয়ে আলোচনা সভায় মিলিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল হকের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) ফারুক আল মাসুদ।বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সভাপতি আলমগীর সরকার, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর বীর মুক্তিযোদ্ধা মনিরুজ্জামান মন্টু, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক জবা, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল,বীরমুক্তিযোদ্ধা শাহজান আলী বুলবুল, বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
জাফরান