ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট, ধান চাষে নিরুৎসাহ

জাহিদ হাসান মাহমুদ মিম্পা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৭:১৮, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট, ধান চাষে নিরুৎসাহ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকটের আশঙ্কায় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সেখানে কৃষকদের ধান চাষে নিরুৎসাহ দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ভূগর্ভস্থ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলে এই সংকট প্রকট ও দীর্ঘ হচ্ছে। সূত্রমতে, এ কারণে ওই সব এলাকায় আগামীতে ইরি ধান চাষে নিরুৎসাহ দিচ্ছে বিএমডিএ। এতে আগামীতে খাদ্য উৎপাদনে চরম অনিশ্চয়তার শঙ্কা করা হচ্ছে। এতে কৃষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

বাধ্য হয়ে অন্য ফসল উৎপাদনের প্রস্তুত নিচ্ছেন তারা। কৃষকরা বলছেন, বিএমডিএ’র এ সিদ্ধান্তে দেখা দিতে পারে চালের চরম সংকট। আর বিএমডিএর দাবি, আগামী দিনে পানির ব্যবহার নিশ্চিত করতেই নেওয়া হয়েছে এমন উদ্যোগ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বরেন্দ্র এলাকায় মাসখানেক ধরেই চলছে আমন ধান ঘরে তোলার কাজ। অনেক কৃষক আবার ধান ঘরে তুলে জমি প্রস্তুত করছিলেন ইরি ধান চাষ করার জন্য। কিন্তু হঠাৎ বিএমডিএ এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ইরি ধান চাষ না করতে ডিপোর অপারেটর ও সংশ্লিষ্ট কৃষকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করছে।

এমনকি নির্দেশ অমান্য করে ধান চাষ করলে বেঁধে দেয়া সময়ের বেশি বিদ্যুৎ না দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই বিএমডিএর নির্দেশ মেনে মৌসুমি ফসল গম, মুসর ডাল ও ভুট্টা চাষে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
কৃষক এনামুল হক বলেন, ধান ছাড়া লাভজনক তেমন অন্য কোনো ফসল উৎপাদন হয় না বরেন্দ্র অঞ্চলে। তাই বছরে তিনবার ধান চাষ করেন তিনিসহ অন্য কৃষকরা। কিন্তু পানির সংকট বলে বিএমডিএ এবার ইরি ধান চাষ করতে নিষেধ করেছে। বিএমডিএর ডিপ টিউবওয়েল অপারেটর সাইদুর রহমান বলেন, ধান চাষ কমানোর বার্তা দিয়ে বিএমডিএ নির্দেশ দিয়েছে মৌসুমি ফসলে সেচ দিতে।
বিএমডিএ সূত্রে জানা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলে প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে এবং মাটির নিচে পানির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

প্রতিবছর ইরি ধান আবাদ করতে ১৬ থেকে ১৮টি সেচ লাগে। অন্যদিকে, গম চাষ করতে মাত্র ২ থেকে ৩টি সেচ লাগে। এ ছাড়া প্রতিবছর বৃষ্টির মাধ্যমে ভূগর্ভে পানি জমা হয় ৯০০ মিলিমিটারের মতো, অপরদিকে এ জেলায় ফসল চাষে পানি লাগে ১৩০০ মিলিমিটার। ফলে প্রতিবছর ৪০০ মিলিমিটার পানি ঘাটতি থাকে। এতে প্রতিনিয়ত বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটির নিচের পানির তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে।

তাই এ অঞ্চলে ইরি ধান আবাদ না করলে পানির সংকট ধীরে ধীরে কেটে যাবে বলে আশা করছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে তারা কৃষকদের ইরি ধান চাষাবাদে নিরুৎসাহিত করার জন্য কৃষকের মাঝে লিফলেট বিতরণ ও প্রতি স্কিমে ডিপ থেকে পানি দেয়ার কর্মঘণ্টা বেঁধে দিয়েছেন।
বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মুসাইদ মাসরুর বলেন, দিন দিন ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। তাই পানি ধরে রাখতে এবং আগামীতে সেচ নিশ্চিত করতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোর জন্য এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তার দাবি, মৌসুমি ফসল হিসেবে বিভিন্ন জাতের ডাল, শাকসবজি, আলু উৎপাদন হয় অল্প সেচে। তাই কৃষকদের মৌসুমি ফসল উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ এই মৌসুমে ইরি ধানের আবাদ কমিয়ে দিয়ে বা নিরুৎসাহিত করে ডাল, গম, ভুট্টা জাতীয় ফসল চাষে উৎসাহিত করছেন। তারা আমাদেরকে এ বিষয়ে অবগত করেছেন এবং আমরাও মাঠ পর্যায়ে কৃষকদেরকে বলছি। কারণ হলো বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি ভালো উদ্যোগ। এই সিদ্ধান্ত আরও আগে নিলে ভালো হতো।

এর ফলে আমাদের এই অঞ্চলে ডাল, গম ও ভুট্টা চাষের পরিধি বাড়ছে। এ ছাড়া ভূর্গস্থ পানির লেভেলটা ঠিক মাপে রেখে যদি আমরা বোরো ধানের চাষাবাদ কমিয়ে আনতে পারি তাহলে এই অঞ্চলের জন্য এটা একটা শুভ বার্তা এবং যে ফসলগুলোতে পানি কম লাগে সেই ফসলগুলো উৎপাদন করলে এই অঞ্চলের কৃষি বাঁচবে। তাই এটি একটি ভালো সিদ্ধান্ত এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এটিকে বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে এবং এটিকে বাস্তবায়ন করতে পারলে এই অঞ্চলের কৃষি বেঁচে যাবে।

 

×