ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

চাঁদা নিয়ে বরিশাল স্পিডবোট ঘাটে নৈরাজ্যের অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ১৬:৪৯, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

চাঁদা নিয়ে বরিশাল স্পিডবোট ঘাটে নৈরাজ্যের অভিযোগ

বরিশাল থেকে দ্বীপ জেলা ভোলায় সরাসরি সড়কপথ না থাকায় বাধ্য হয়েই নদীপথে যাতায়াত করে থাকেন এসব জনপদের মানুষ। এসব রুটে ফেরি ও লঞ্চ প্রধান বাহন হলেও সময় স্বল্পতার কারণে স্পিডবোটে যাতায়াত করেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী।
তবে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জাম এ রুটের লঞ্চগুলোতে যেমন নেই, তেমনি স্পিডবোটগুলোর ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। বরং দ্রুতগতির যান হওয়ায় যে ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বিশেষ করে লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা তা বেশিরভাগ স্পিডবোটেই দেখা যায় না। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
তবে বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেড সংগঠনটি রাজনৈতিকভাবে নিয়ন্ত্রন হয় বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এরআগে এই ঘাট নিয়ন্ত্রন করতেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। এরপর তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের মেয়রের আসনে বসলে ওই ঘাট দখলে নেন তার অনুসারীরা। এনিয়ে দুইপক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার হাতাহাতি ও মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।
এরইমধ্যে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর সেই ঘাট দখলে নিয়েছেন বিএনপি ঘরোনার বেশ কিছু স্পিডবোট মালিক। তারা ঘাটে নৈরাজ্য গড়ে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে নৈশ প্রহরী ও লাইন ম্যানের নামে মাসে স্পিডবোট প্রতি দুইশ’ টাকা করে নেওয়া হলেও তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতশ’ টাকায়। ঘাট উন্নয়নের নামে এই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের বর্তমান সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক।

বাড়তি টাকা নেওয়ার কারণে অধিকাংশ স্পিডবোট মালিকরা তাদের নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই এই ঘাটে বৈধ-অবৈধতার বালাই না মেনে প্রতিনিয়ত চলছে কাগজপত্রবিহীন বা ফিটনেস বিহীন স্পিডবোট। এমনকি সন্ধ্যার পরে বোট চালনা বন্ধ রাখার কথা থাকলেও হরহামেশাই চলছে স্পিডবোট। ফলে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের নামে সংগঠনের আওতায় ১০৮টি সিরিয়াল স্পিডবোট ভোলা রুটে যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। বোট প্রতি সাতশ’ টাকা উত্তোলন করলে সে হিসেবে মাসে প্রায় ৭৫ হাজার ৬ শ’ টাকা উত্তোলন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্পিডবোট মালিকরা বলেছেন, আগেই ভালো ছিলাম। আগে দুইশ’ টাকা দিয়ে রক্ষা হতো, এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাতশ’ টাকা। এমনিতেই তেলের দাম বাড়তি তার উপরে মাসে সাতশ’ টাকা দেওয়াটা বেশি চাঁপের হয়ে যায়। এ টাকা নিয়ে নেতাদের উন্নয়ন হবে কিন্তু ঘাটের উন্নয়ন হবে না বলেও তারা উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা স্পিডবোট মালিক ও শ্রমিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মিলন শেখ বলেন, সাতশ’ টাকা করেই নেওয়া হয়। বিগতদিনে ঘাটে কোন উন্নয়ন কাজ হয়নি। এই টাকা দিয়ে ঘাটের উন্নয়ন কাজ করা হবে। সাধারণ সম্পাদক অহিদুল আলম বোট প্রতি সাতশ’ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা সকল বোট মালিকদের সাথে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে কারো অপত্তি ছিলোনা। তিনি আরও বলেন, আমরা মাত্র এক মাস টাকা তুলেছি।
এ ব্যাপারে বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি স্পিডবোটের গতি নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে নানা দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

কুতুব

×