ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলামের সফলতার গল্প

কালিদাস রায়, নাটোর

প্রকাশিত: ১৫:০৬, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলামের সফলতার গল্প

উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম

শূন্য থেকে শুরু করে প্রতিকূল পথ ধরে সত্যনিষ্ঠভাবে কঠোর পরিশ্রমের দ্বারা অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ সফল হয়েছেন। সফল হচ্ছেন। তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার শেখপাড়া এলাকার তরুণ উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলাম (২৮) তাদের মতই একজন। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে লেবু বাগান ব্যবসার পাশাপাশি বরই চাষে সাফল্য কুড়িয়েছেন। তিনি একই এলাকার আব্দুল কুদ্দুস মন্ডলের ছেলে। 

নিম্নবিত্ত পরিবারে ৫ম ছেলে সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে এইচ এসসি পরীক্ষায় পাশ করার আর লেখাপড়া ছাড়তে বাধ্য হন রাকিবুল ইসলাম। এরপর স্বল্প পরিসরে লেবুর বাগান ব্যবসা শুরু করেন। এতেও যেন তার মন পরিতৃপ্ত হচ্ছিল। আড়াই বছর আগে একদিন তিনি এক উদ্যোক্তার বরই বাগান দেখতে যান। সেখানে তিনি ‘ভারত সুন্দরী’ বা ‘বল সুন্দরী’ জাতের বরইয়ের বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে বাগান করার পরিকল্পনা করেন। লেবু বাগানের ব্যবসা থেকে সঞ্চিত ২ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে ৮ বছরের জন্য ৬৬ শতক জমি লিজ নেন তিনি। ওই জমিতে তিনি প্রায় তিন শতাধিক ‘ভারত সুন্দরী’ জাতের চারা গাছ রোপণ করেন। সাথী ফসল হিসেবে বাগানে থাই পেয়ারার চারা রোপন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের নিকট থেকে প্রতিনিয়ত নানা পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান তার তৈরীকৃত বাগানে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি মৌসুমে তিনি দ্বিগুন লাভের স্বপ্ন দেখছেন। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রাকিবুলের বরই বাগানে ভারত সুন্দরী জাতের বরইয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে। বেশিরভাগ বরই পেকে গেছে। ইতোমধ্যে তিনি বরই বাজারজাত করা শুরু করছেন। বাগানে প্রতিদিন ৮-১০ জন শ্রমিক মজুরী খাটছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে উৎসাহী তরুণ ও চাষীরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে বরই চাষে সার ও কীটনাশকের পরিমাণ বেশি লাগে। বাজারে ভেজাল সার ও কীটনাশকের দৌরাত্ব ও সিন্ডিকেট দুর করার দাবি জানিয়েছেন রাকিবুল ইসলামের মত উদীয়মান চাষি ও উদ্যোক্তারা।

রাকিবুল ইসলাম জানান, বাজারে ভারত সুন্দরী জাতের বরইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিক্রি করা নিয়ে চিন্তিত হতে হয়নি। ইতোমধ্যে বাগানে তিন লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর প্রতিমণ বরই ৫ থেকে ৮হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৬ লক্ষ টাকার বরই বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরো জানান, আগামীতে ৮/১০ বিঘা জমিতে বরইয়ের বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, গত মৌসুমে জেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪হাজার ৩৪৩ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৩৬০ হেক্টর জমিতে বরইয়ের চাষ হয়েছে। অন্যদিকে বাগাতিপাড়া উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে বরইয়ের চাষ হয়েছে। এছাড়া জেলায় অগ্রসরমান কৃষকের সংখ্যা ৩৩৮ জন। ক্রমেই জেলায় অগ্রসরমান কৃষকের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তরটি। 

বাগাতিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. ভবসিন্ধু রায় জানান, বরইয়ের অন্যান্য জাতের মধ্যে ‘ভারত সুন্দরী’ বা ‘বল সুন্দরী’ জাতের কুল বেশি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। দেখতে সুন্দর, আকর্ষনীয়, সুস্বাদু, পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ও মাংসাশী এর অন্যতম কারণ। কুল চাষ সম্প্রসারণে অন্যান্য চাষীর মতই তরুণ উদ্যোক্তা রাকিবুল ইসলামকে আমরা বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ ও সহযোগীতা করে যাচ্ছি। আশা করছি তিনি আরো সফল হবেন।

এম হাসান

×