ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মুকসুদপুর, গোপালগঞ্জ

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ২৩:৩৯, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

যত্রতত্র দাহ্যপদার্থ ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ এসব দাহ্যপদার্থ।

মুকসুদপুর বাজারসহ পৌরসভাধীন ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের হাট-বাজার ও জনবহুল স্থানে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে পেট্রোলিয়াম (এলপি) গ্যাসের সিলিন্ডার, অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল ও মবিলসহ বিভিন্ন দাহ্যপদার্থ। সরকারি কোন ধরনের নীতিমালার তোয়াক্কা না করে প্রক্যাশ্যে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ এসব দাহ্যপদার্থ।

এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করেন সচেতনমহল। বিশেষ করে মুকসুদপুর-জলিরপাড় আঞ্চলিক সড়কের বোয়ালিয়া, বালিয়াকান্দি, উজানি, জলিরপাড়, অন্যদিকে বনগ্রাম, বাটিকামারি , বরইতলা, নতুনবাজার, মুকসুদপুর থেকে রাজপাট সড়কের প্রতিটি বাজারসহ গ্রামের হাট-বাজারগুলোতে খোলামেলাভাবে বিক্রি হচ্ছে পেট্রোল, ডিজেল ও মবিলসহ বিভিন্ন দাহ্যপদার্থ ও গ্যাস সিলিন্ডিার। অথচ গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রিতে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক।


মুকসুদপুর বাজারসহ ইউনিয়নের হাটবাজারগুলোতে দেখাগেছে প্রধান সড়কের পাশে, মুদি দোকান, হার্ডওয়ার এন্ড স্যানেটারী দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবাধে বিক্রি হচ্ছে, বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস সিলিন্ডার। এছাড়া বিভিন্ন দোকানে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের বাজারে লিটার হিসেবে বিশেষ করে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটারসহ বিভিন্ন ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে পেট্রোল, ডিজেল ও মবিলে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে।


এসব দোকান থেকে যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি দাহ্যপদার্থ কিনতে পারেন। গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থের এ সহজলভ্যতা এবং অবাধে বিক্রির ফলে যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যার কারণে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ।


সরকারি নিয়ম অনুযায়ী গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, ডিজেল ও মবিলসহ দাহ্যপদার্থ বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধা-পাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা সংক্রান্ত লাইলেন্স, অগ্নিনির্বাপণ সিলিন্ডার, মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে। একজন ব্যবসায়ী ওই সব শর্ত পূরণ করলেই কেবল গ্যাস সিলিন্ডারসহ বিস্ফোরক দ্রব্য বা দাহ্যপদার্থ বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।


আর গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি করতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্র, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ট্রেড লাইসেন্স ও টিন সার্টিফিকেটের পাশাপাশি দোকানের অবস্থান চিহ্নিত ম্যাপ (মানচিত্র), ফায়ার লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন কর্তৃক সনদ থাকা বাধ্যতামূলক।


এর মধ্যে বিস্ফোরক লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে গ্যাস সিলিন্ডার বা দাহ্যপদার্থ বিক্রি করা যাবে না। অথচ মুকসুদপুর বাজারসহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে গ্যাস সিলিন্ডারসহ দাহ্যপদার্থ। হাতে গোনা দু'চারটি দোকানে সম্পূর্ণ কাগজপত্র থাকলেও বেশিরভাগ দোকানে নেই কোনপ্রকার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র।


২০০৩ সালের দাহ্যপদার্থ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি লাইসেন্স না নিয়ে বিস্ফোরক দ্রব্যের ব্যবসা করে, তার ৩ বছরের কারাদন্ড ও অতিরিক্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হওয়ার আইনের বিধান রয়েছে। প্রয়োজনে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সব মালামাল বাজেয়াপ্ত করা যাবে বলেও আইনে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সচেতনমহলের সাথে কথা হলে তারা বলেন, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রির ক্ষেত্রে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকা দরকার। নজরদারি না থাকার কারণে যত্রতত্র চলছে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি। ফলে সাধারণ মানুষ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।


মুকসুদপুর বাজারের দাহ্যপদার্থ বিক্রয়কারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার নিজের ও বন্ধুদের কয়েকটি গাড়ি রয়েছে। প্রতিদিন শত লিটারেরও বেশি তেল লাগে। তাই তিনি নিজে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দিয়ে তেল বিক্রি করছেন। এতে নিজের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে, আবার বিক্রি করে ব্যবসাও করছেন।


এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রেতা ও অপর একজন দাহ্যপদার্থ বিক্রেতা জানান, তারা ছোট ব্যবসায়ী। আইন সম্পর্কে কোন ধারণা তাদের নেই। কাস্টমারের (ক্রেতা) চাহিদা থাকায় ডিলারদের কাছ থেকে পাইকারি গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল, ডিজেল ও মবিল এনে খুচরা বিক্রি করছেন।


মুকসুদপুর ফায়ার সার্ভিসের লিডার আনোয়ার হোসেন জানান, সরকারি অনুমিত (লাইসেন্স) ছাড়া কেউ গ্যাস সিলিন্ডার ও দাহ্যপদার্থ বিক্রি করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, যে হারে দুর্ঘটনা বাড়ছে, তা থেকে রক্ষা পেতে হলে, সবাইকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

রিয়াদ

×