ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রাজমিস্ত্রি

স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:১৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

ছাত্র আন্দোলনে নিহত রাজমিস্ত্রি

চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছে খাদিজা বেগম ও তার শিশু সন্তান।  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত জুলাই মাসে স্বামী মারা যাবার মাত্র ৫ মাসেই তার জীবনের সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। শিশুসন্তানকে নিয়ে সে বাবারবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। বাবার বাড়িভিটা নেই। মানুষের জমিতে বাস করে। কারণ তার ভরণ-পোষণ বাবা-মায়ের কাছেও এক প্রকার বোঝা হয়ে গেছে। সরকারিভাবে কিছু টাকা অনুদান পেলেও শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে নিয়েছে। তাকে দিয়েছে সামান্য কিছু টাকা। কিভাবে চলবে আগামীতে জানেনা।                                       
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া গ্রামের রাজমিস্ত্রি নুর আলম। অভাবী সংসার তাদের। জীবনের তাগিদে গাজীপুরের তেলিপাড়া গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন নুর আলম। গত ২০ জুলাই  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ডান চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় নুর আলম। গাজীপুর হাসপাতালে নিলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। খাদিজা খাতুন জানায়, আমার স্বামী গাজীপুর চৌরাস্তায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। আমার সন্তান তখন ৭ মাসের গর্ভে। আমার শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির সবাই মিলে স্বামীর মৃত্যুর ৪৪দিন পর বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে বিভিন্ন জায়গা থেকে সহযোগিতা করছে। সেই টাকার খবর যাতে আমি না শুনি, এ কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি চাই, সরকার আমার এতিম শিশুটির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আমাকে একটি কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক।
খাদিজার বাবা নুরু মিয়া জানান, আমার জামাই ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। ৪৪দিন পর আমার মেয়েকে তার শ্বশুর-শাশুড়িসহ বাড়ির সবাই মিলে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। সরকারি যে অনুদান পেয়েছিলাম তাও ওরা নিয়েছে। আমার নাতির হার্টের সমস্যা। আমি দিনমজুরি করে সংসার চালাই। সরকার যেন কিছু একটা অনুদান দেয়।


নুর আলমের বাবা  আমীর হোসেন জানান, নুর আলমকে হারিয়ে আমরা ভালো নেই। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা আসছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ১০ লাখ টাকার চেক পেয়েছি। জেলা প্রশাসন থেকে ৫০ হাজার, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ৫ হাজারসহ অনেকে ব্যক্তিগতভাবেও টাকা দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমার নাতি ও ছেলের বউ খাদিজা বর্তমানে ওর বাবার বাসায় আছে। তার সঙ্গে আমরা কোনো ঝগড়াবিবাদ করিনি। সে নিজ ইচ্ছায় ওর বাবার বাসায় চলে গেছে।  মেম্বার আবদুল হক জানান, নুর আলমের স্ত্রী পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে বর্তমানে তার বাবারবাড়িতে থাকে। তার সন্তানের হার্টের সমস্যা রয়েছে। সরকারিভাবে ভাতা পেলে ঐ পরিবারটি খুব উপকৃত হতো।

মোহাম্মদ আলী

×