ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

সড়কের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার, জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব সংবাদদাতা, চাটমোহর (পাবনা)

প্রকাশিত: ১৭:২০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

সড়কের কাজ ফেলে লাপাত্তা ঠিকাদার, জনদুর্ভোগ চরমে

বালুতে দেবে যাচ্ছে চাকা, উল্টে যাচ্ছে গাড়ি। ভাড়াটিয়া গাড়ি ঠেলে রাস্তা পার করছে।

কাজের সময়সীমা আছে তিন মাস, আট মাসের কাজ মাত্র দুই মাস করার পর খোঁজ মিলছে না ঠিকাদারের। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি গা ঢাকা দেওয়ায় সংস্কারকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এতে সড়কে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনসাধারণকে। পাবনার চাটমোহর-হান্ডিয়াল-হামকুড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারকারের কাজ ফেলে লাপাত্তা টিকাদার।  

পাবনার চাটমোহরে ১২ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার ও মেরামত কাজ ফেলে রেখে প্রায় তিন মাস ধরে লাপাত্তা সড়ক বিভাগের এক ঠিকাদার। ফলে সড়কটি এলাকাবাসীর জন্য এখন ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সড়কজুড়ে খানাখন্দ ও অসংখ্য ছোট বড় গর্তের কারণে মানুষ চলাচলে সুফল পাচ্ছে না, পড়তে হচ্ছে প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে। অভিযোগ ঠিকাদার ও সড়ক বিভাগের গাফিলতির কারণেই পথচারী লক্ষাধিক মানুষ ও যানবাহন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাটমোহর উপজেলা থেকে ভায়া হান্ডিয়াল-হামকুড়িয়া পর্যন্ত ঢাকা রাজশাহী মহাসড়কের শাখা সড়ক এটি। পাবনা সদর, আটঘরিয়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়াসহ কয়েকটি উপজেলার সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগের বিকল্প পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই আঞ্চলিক সড়কটি। সড়কটির কল্যাণে এইসব অঞ্চলের মানুষদের ঢাকায় যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হয়। ফলে চলনবিল অঞ্চলের মৎস্য ও কৃষিপণ্য পরিবহনেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে আঞ্চলিক মহাসড়কটি।

পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানায়, চাটমোহর থেকে হান্ডিয়াল হামকুড়িয়া ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়কের চাটমোহর জার্দিস মোড় থেকে হান্ডিয়াল পর্যন্ত ১৬ কোটি টাকা বরাদ্ধে প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হয় গত জুলাই মাসে। চাটমোহর বাজারের জারদিস মোড় থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কটি সংস্কারকাজ শুরু করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিরাজগঞ্জের টুর্ণা এন্টারপ্রাইজ। এ কাজের সময়সিমা আগামী ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত থাকলেও এখন পর্যন্ত ১০ ভাগ কাজও শেষ হয়নি সড়কে।  

সড়জমিনে ও স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, কয়েক বছর ধরে চাটমোহর-মান্নাননগর আঞ্চলিক মহাসড়কটি দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছিল। একপর্যায়ে প্রায় তিন মাস আগে ঘটা করে সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু হলেও গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই গা ঢাকা দেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী। সড়কের ১৮ কিলোমিটারের মধ্যে ১২ কিলোমিটার নতুন করে সংস্কারকাজ করা হলেও অসমাপ্ত থাকে কাজটি। চাটমোহর পৌর শহরের জারদিস মোড় থেকে শুরু করে কুজোড় মোড় এলাকা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার সড়কের পুরোনো কার্পেটিং তুলে ফেলা হয়। সড়কের দুই পাশে বেজওয়াল নির্মাণ করে রাস্তায় ফেলা হয় বালু ও পাথর। এর পরই বন্ধ হয়ে যায় কাজ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ওই এলাকার মানুষ। অসমাপ্ত সড়কের ছোট ছোট পাথর মানুষের যাতায়াতে বিঘ্ন ঘটার পাশাপাশি ধুলার আস্তরণে ঢাকা পড়েছে রাস্তা। সড়কের পাশের দোকানপাট, বাড়িঘর ও গাছপালা ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। রাস্তাজুড়ে অসংখ্য খানাখন্দ থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কটি মারণফাঁদে পরিণত হয়। গাড়ির চাকা দেবে যাওয়া থেকে শুরু করে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পথচারী সহ যানবাহন চালকরা। এ ছাড়া প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয়রা জানায়, এলাকাটি কৃষিপ্রধান হওয়ায় সবচেয়ে বেশি কৃষিপণ্য উৎপাদিত হয় এ অঞ্চলে। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বেহাল থাকায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সময়মতো পাঠাতে পারছেন না। বেড়েছে পরিবহন খরচ।
পথচারী ইমতিয়াজ ও রতন বলেন, সড়কের কাজ শুরু দেখে ভাবলাম পথচারীদের কষ্টের দিন শেষ হবে, জনদূর্ভোগ লাগব হবে। এখন দেখছি আগের ভাঙ্গাচোরা রাস্তাই ভালো ছিল। তবুও এমন ধুলো উড়ত না। প্রতিদিন এই পথদিয়ে অফিস করছি, ধুলাবালিতে শরীর মেখে যাচ্ছে ও জামা কাপড় নষ্ট হচ্ছে। স্কুলগামী ছাত্র ছাত্রীদের কষ্টের শেষ নেই, যাতায়াত করছে ঝুঁকিতে।  

যানবাহন চালকেরা বলেন, মাঝপথে সড়কের বেহাল দশায় এলাকাবাসীর ভোগান্তিকে অসহনীয় করে তুলেছে। জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে হয়। ছোট ছোট পাথড়ের ওপর দিয়ে চলাচল করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। ব্যাটারিচালিত অটো বোরাক উল্টে যাচ্ছে। ভাড়াটিয়া ও যাত্রীদের দিয়ে গাড়ি ঠেলে কিছু রাস্তা পার করতে হয়। মাঝে মাঝেই ঘটছে দুর্ঘটনা। ধুলায় মধ্যে চলাচলে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, শরীরের পোষাক নষ্ট হচ্ছে।

তারা আরো বলেন, সবজি ও কৃষিপণ্য পরিবহনসহ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছা যাচ্ছে না। বেড়েছে পরিবহন খরচ জরুরি রোগী হাসপাতালে পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য পরিবহনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে ন্যায্য দাম পাচ্ছে না অনেক কৃষক। সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোনো মাথা ব্যথা নেই। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাচ্ছি।

সড়ক সংস্কারে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টুর্ণা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোঃ আবুল কালাম আজাদ কে তার মুঠোফোনে বার বার কল দেওয়ার পরও সে রিসিভ করেনি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগর পাবনা’র নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল মনসুর আহমেদ চাটমোহর-হান্ডিয়াল-হামকুড়িয়া আঞ্চলিক সড়ক সংস্কারকারের কাজ ফেলে টিকাদার লাপাত্তা সত্যতা শিকার করে বলেন, কয়েক বার সতর্ক করার পরও ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি। শেষবারের মতো ঠিকাদারকে জানানো হয়েছে। যদি দ্রুত কাজ শুরু না করেন তাহলে ওই ঠিকাদারের কাজ বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হবে।

মোহাম্মদ আলী

×