বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর পক্ষে ঢাকা থেকে আসা এক আইনজীবীর শুনানির আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা বলেছেন, আসামির পক্ষে ওই আইনজীবীর কোন ওকালতনামা না থাকায় তা খারিজ করা হয়েছে।
তবে চিন্ময় ব্রহ্মচারীর পক্ষে আবেদনকারী আইনজীবী বলছেন, আইনজীবীদের বিরোধীতার কারণে তার আবেদনের শুনানি করা সম্ভব হয়নি।
বুধবার বেলা ১১ টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক সাইফুল ইসলামে আদালতে শুনানি আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ।
দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সহকারী সরকারি কৌঁসুলি অ্যাডভোকেট মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, আসামিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ তিনটি পিটিশন দেয়। এর মধ্যে একটি চিন্ময়ের মামলাটি শুনানি করার জন্য, আরেকটি দেন নথি উপস্থাপনের জন্য এবং তৃতীয়টি হল শুনানির তারিখ ২ জানুয়ারি থেকে এগিয়ে আনার জন্য। তখন আদালত উনার (রবীন্দ্র ঘোষ) কাছে আসামির পক্ষে ওকালনামা আছে কিনা জানতে চান এবং আসামির ফাইলিং আইনজীবী শুভাশীষ শর্মার লিখিত অনুমতি আছে কিনা জানতে চান। তখন ঢাকা থেকে আসা ওই আইনজীবী জানান, তার কাছে নাই। তখন বিচারক তার পিটিশনগুলো খারিজ করে দেন।
এদিকে আদালত সূত্র জানান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ আদালতে শুনানির জন্য আবেদন করলে তখন প্রচুর হট্টগোল শুরু হয়। এসময় জেলা আইনজীবী সমিতির প্রায় শতাধিক আইনজীবী আদালতে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেন।
আবেদনকারী আইনজীবী বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচের চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, আমি তিনটি আবেদন জমা দিয়েছিলাম। একটি হল যে মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সেই মামলায় তার পক্ষে আইনজীবী হিসেবে শুনানি করার আবেদন।
দ্বিতীয়টি ছিল, ২৬ নভেম্বর করা মিস মামলার নথি উপস্থাপনের জন্য এবং তৃতীয় আবেদনটি ছিল চিন্ময় কৃষ্ণের জামিন শুনানির নির্ধারিত যে তারিখ ছিল, তা এগিয়ে আনার জন্য।
কিন্তু চট্টগ্রাম আদালতের কিছু পলিটিক্যাল আইনজীবীর কারণে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি হয়। চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য চিন্ময় ব্রহ্মচারীকে আইনগত সহায়তার জন্য দাঁড়াতে পারছেন না। তাই আমি আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আদালতে শুনানির সময় শতাধিক আইনজীবী একসঙ্গে চিৎকার করতে থাকেন,পারবেন না বলে৷ এখানকার পরিস্থিতি এমন, তা বুঝতে পারিনি। এটা খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি।
ওকালতনামা না থাকার বিষয়ে রবীন্দ্র ঘোষ জানান, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে যেসব আইনজীবী ছিলেন তারা তো এখন মামলার আসামি। আমি এসে দেখলাম পরিস্থিতি কি। তারা কিভাবে এখানে আসবেন? এখানে তো আইনজীবীরা কথাই বলতে দিচ্ছেন না। আমি সুপ্রিম কোর্টে ৩৮ বছর প্র্যাকটিস করি, একজন সিনিয়র আইনজীবী। আমি নিজে স্বাক্ষর করে শুনানি করার আবেদন করেছি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব।
এদিকে শুনানি শেষে আইনজীবীদের একাংশ আদালত ভবনের ভিতর মিছিল করতে থাকেন। তারা ‘ইসকনের দালালেরা হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দিয়ে মিছিল করেন।
অপরদিকে জোটের নেতারা সবশেষ বিবৃতিতেও জানিয়েছিল চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে আইনজীবীদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। গত সোমবার জেলা আইনজীবী সমিতি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিল, বাইরে থেকে আইনজীবী এসে কোর্টে দাঁড়ালে তাদের আপত্তি নেই। পাশাপাশি চিন্ময় কৃষ্ণকে সকল মামলায় আসামি করারও দাবি জানান।
এর আগে, গত ৩ ডিসেম্বর চিন্ময়ের জামিন শুনানিতে চট্টগ্রামের কোনো আইনজীবী উপস্থিত না হওয়ায় আদালত আগামী ২ জানুয়ারি ফের শুনানির দিন ধার্য করেন। ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নাকচ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তখন আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করে সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন। তিনঘন্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময় দাশকে কারাগারে নিয়ে যায়। এরপর সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে আদালতে পাদদেশে রঙ্গম কনভেনশন সংলগ্ন সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করা হয়।
এরপর আদালত এলাকায় সংঘর্ষ, ভাংচুর ও পুলিশের কাজে বাধাদানের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। তিন মামলায় মোট ৭৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও মোট ১৪০০ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া ঘটনার তিন দিন পর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার ঘটনায় তারা বাবা বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাতনামা আরও ১০-১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
একইদিন আলিফের ভাই খানে আলম বাদী হয়ে যানবাহন ভাংচুর ও জনসাধারণের ওপর হামলার ঘটনায় ১১৬ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন থানায়। এরমধ্যে ৭০ আইনজীবীকে আসামি করা হয়।
আলিফ হত্যার প্রতিবাদে ২৭ ও ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালতে বর্জন ও কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা।
জাফরান