ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

রামপালে লবণসহিষ্ণু আমনে বাম্পার ফলন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪

রামপালে লবণসহিষ্ণু আমনে বাম্পার ফলন

.

প্রতিকূল পরিবেশ ও তীব্র লবণাক্ততার মধ্যেও রামপালে আমন ধানের আবাদ বেড়েছে। লবণ সহিষ্ণু জাত, উন্নত বীজ, কৃষকদের প্রশিক্ষণ, সঠিক বীজ নির্বাচন ও সেচ ব্যবস্থা সহজীকরণসহ অনুকূল আবহাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে উপজেলায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকদের মুখে। কৃষি অফিসের তথ্যমতে, এ উপজেলায় এখন ঘাটতি কাটিয়ে খাদ্য চাহিদার বিপরীতে উদ্বৃত্ত ফলন হচ্ছে। 
রামপাল উপজেলা কৃষি অফিসসূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন উৎপাদন হয়েছে। এক সময় এই উপজেলায় ২০ থেকে ২২ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হতো। কিন্তু চিংড়ি চাষ, উপকূলীয় হওয়ায় আইলাসহ ঘূর্ণিঝড়, তীব্র লবণাক্ততা, জলবায়ু পরিবর্তন ও ধূসর বালুময় হওয়ার কারণে আমনের উৎপাদন মারাত্মক হ্রাস পায়। তবে সম্প্রতি লবণ সহিষ্ণু বীজসহ সার ও কীটনাশক সরবরাহ এবং কৃষি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যার ফলে ধীরে ধীরে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।   
সিংগাড়বুনিয়া গ্রামের কৃষক এম এম মহিতুর রহমান জানান, আশানুরূপ বৃষ্টিপাত, আবহাওয়া অনুকূল এবং কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতার কারণে এবার আমনের ফলন ভালো হয়েছে। পোকামাকড় ও ইঁদুরের উপদ্রব তেমন ছিল না। একই কথা বলেন, বড়দিয়ার কৃষক মন্তাজ মোল্লা। তিনি বলেন, কৃষি অফিস নতুন প্রজন্মের লবণ সহিষ্ণু উন্নতমানের ১০৩ জাতের বীজ দিয়েছে। এতে খুব ভালো ফলন হয়েছে। কৃষাণী সুমিতা বিশ্বাস বলেন, এবার ঝড়-বৃষ্টি খুব বেশি হয়নি, সে কারণে ধান পড়ে যায়নি। ভালো ধান পাইছি। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওয়ালিউল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে এ বছর আমনের ফলন বেড়েছে। এর মধ্যে প্রধান কারণ হলো, উন্নত জাতের বীজ নির্বাচন, অনুকূল আবহাওয়া, কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার সহায়তা দেওয়া, মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা ইত্যাদি। সব ইউনিয়নে আবাদ সম্প্রসারণ হয়েছে। প্রণোদনা পুনর্বাসনের মাধ্যমে কৃষককে হাইব্রিড ধানের বীজ দেওয়া হয়েছে। রামপাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফা আক্তার নেলী বলেন, ‘উন্নত ব্যবস্থাপনা, বীজ ও নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারসহ নিবিড় মনিটরিংয়ের ফলে লবণাক্ততা সত্ত্বেও কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ছে। ঘাটতি থেকে এখন খাদ্যে উদ্বৃত্ত হচ্ছে রামপাল। কৃষকদের যে কোনো চাহিদার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হয়।’  
ঝিনাইদহে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ থেকে জানান, আমনধান গোছানো প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় ৯৯ দশমিক ২০ ভাগ ধান গোছানো শেষ হয়েছে। এবারে ধানের যে দাম পাচ্ছেন তাতে খুশি কৃষক। হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। 
এ ছাড়া আমন ধান উপৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। জেলার অন্যতম ধানের হাটগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিধান ৫১ ধান প্রতিমন সাড়ে ১ হাজার ৪’শ থেকে ১৪’শ ৭০ টাকা, বাঁশমতি ( ব্রিধান ৫০) প্রতিমন ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১’শ ৫০ টাকা, স্বর্ণাধান ১ হাজার ৩’শ থেকে ১৩’শ ৭৫ টাকা, ব্রিধান ৪৯ প্রতিমণ ১ হাজার ৪’শ টাকা, ধানিগোল্ড ১ হাজার ৪’শ টাকাসহ ধানের মানভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। 
ডাকবাংলা বাজারে ধানবিক্রি করতে আসা কৃষক আমিরুল ইসলাম, সাব্দার হোসেন, আতিয়ার রহমান বলেন, তারা ব্রিধান ৫১ প্রতিমণ ১ হাজার ৪’শ টাকা থেকে ১ হাজার ৪’শ ৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তাদের মতে ধানের বাজার এবার খুবই ভালো। জেলা কৃষক সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (সংযুক্ত) উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, আমনধান আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৮ হেক্টর জমিেিত, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে ৩ হেক্টর বেশি।  আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি জমিতে ধরা হয় ৩ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন, কিন্তু এখন পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৯ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়েছে।

জোবায়ের আহমেদ

×