শেরপুরের সীমান্তবর্তী উপজেলা নালিতাবাড়ীতে ব্যাপক হারে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ছিনতাই। এতে আতংকে দিন কাটছে চালকদের। এ উপজেলায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ৩ থেকে ৪টি বা তারও বেশি অটোরিক্সা ছিনতাই করা হচ্ছে। শুধু ছিনতাই নয়, এসময় আহত করা হয় চালকদের। আবার কখনো কখনো চালককে হত্যার ঘটনাও ঘটছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন খাদ্য দ্রব্যের সাথে চালককে উচ্চ মাত্রার নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর অটোরিক্সা ছিনতাই করা হয়। এদিকে, ছিনতাইয়ের তুলনায় থানায় মামলা কম হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নালিতাবাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সা চালকের খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, তাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম ছিল ওই ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সাটি। ছিনতাই হওয়ার পর অভাব আর চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে তাদের জীবনে। রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছেন তারা। নিহত চালকদের বাড়ি থেকে কাটছে না শোকের মাতম। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজারের অধিক ছোট-বড় অটোরিক্সা চলাচল করে। প্রায় প্রতিদিনই অটোরিক্সা ছিনতাই হওয়ায় আতংক বিরাজ করছে স্থানীয় চালকদের মাঝে।
ছিনতাই হওয়া অটোরিক্সার চালক আব্দুল কাদের জিলানী বলেন, যাত্রী হয়ে গাড়িতে উঠছিল ছিনতাইকারীরা। আমাকে জোর করে জুস খাওয়ায় তারা। এতে হঠাৎ আমার চোখ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এক পুকুর থেকে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই গাড়িটি আমার একমাত্র আয়ের উৎস ছিল।
অপর অটোচালক আব্দুল হামিদ বলেন, যাত্রীদের সুবিধার্থে গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। কিন্তু যেভাবে গাড়ি ছিনতাই হচ্ছে তাতে আমাদের গাড়ি নিয়ে বের হতে ভয় হয়। আরেক অটোরিক্সা চালক হাফিজ উদ্দিন বলেন, আমরা গরীব মানুষ। গাড়ি চালাইলে বউ পোলাপানের ভাত জুটে। গাড়ি যদি ছিনতাইকারী নিয়ে যায় তাহলে আমরা যামু কই, খামু কি ?
আরেক অটোরিক্সাচালক জুয়েল মিয়া বলেন, ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় আমরা ড্রাইভাররা ভয়ের মধ্যে আছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি যাতে এই ছিনতাই থেকে আমাদের রক্ষা করে।
এদিকে, ছিনতাই বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে জানা গেছে, সড়কে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা ও অদক্ষ চালকরা অটোরিক্সা চালায়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকের হাতে অটোরিক্সা থাকায় ছিনতাইকারীরা
সহজেই তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। ছিনতাইকারীর অধিকাংশই আবার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। আবার মাদকাসক্ত যুবসমাজও অটোরইক্সা ছিনতাইয়ের মতো জঘন্য কাজ করে থাকে। এছাড়া অটোচালকদের নেই কোন ন্যূনতম প্রশিক্ষণ। বেশিরভাগ অটোগাড়ি ছিনতাই হয়ে থাকে সন্ধ্যার পর কিংবা দূর-দূরান্তের পথে চলাচলের ক্ষেত্রে। চালকদের নির্দিষ্ট সড়ক বেঁধে না দেওয়াকেও কারণ হিসেবে বলছেন অনেকেই। তবে চালক ও যাত্রী সবাই পরিত্রাণ চান এই ছিনতাই আতংক থেকে।
জানতে চাইলে, এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ী সার্কেল) দিদারুল ইসলাম জানান, অটোরিক্সা ছিনতাইসহ সব ধরনের ছিনতাই বন্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ছিনতাইকৃত অটোচালকরা মামলা দায়ের করলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।