ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১

নর্থ বেঙ্গল চিনি কলের ৩০ একর জমি লিজ

অনিয়ম-দূর্নীতি নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ও চাষীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর 

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

অনিয়ম-দূর্নীতি নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ও চাষীর মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

আখের খামার

নাটোরের নর্থ বেঙ্গল চিনি কলের অধীনে ‘কৃষ্ণা কৃষি খামারে’র জমি লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম-দূর্নীতি নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে মিল কর্তৃপক্ষ ও চাষীরা পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করছেন। এতে করে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে। 

ইতোমধ্যে লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম দূর্নীতি করে ৩০ একর জমির লিজ বাতিল করা হয়েছে দাবি করে এবং খামারের ইনচার্জ ও মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণের দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ করেন চাষীরা। এছাড়া লিজ পুনর্বহাল ও দাবি মানা না হলে পুনরায় কঠোর কর্মসূচী দেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন কৃষক নেতারা।

মিল কর্তৃপক্ষের দাবি, লিজ প্রক্রিয়ার নিয়ম নীতি অমান্য করায় ৩০ একর জমির লিজ বাতিল করা হয়েছে। এদিকে মিল কর্তৃপক্ষ এবং চাষীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ও অবস্থান একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। 


সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের অধীনে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার লোকমানপুর এলাকায় ‘কৃষ্ণা কৃষি খামারে’ অবকাঠামো, পুকুরসহ প্রায় ১১৮৫.৩৩ একর জমি রয়েছে। বিগত দিনে খামারের মধ্যে ২০ একর ও অন্যত্র ১০ একর জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও আখচাষী নেকবর হোসেন।

মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, ৩০নভেম্বর স্বল্পমেয়াদে নতুন করে খামারের জমি লিজ দিতে কোটেশন আহ্বান করা হয়। কোটেশনে নেকবরের কাছের তিনজন অংশ নেন। কিন্তু কোটেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন (ওফার লেটার ও কার্য্যাদেশ না পেতেই) না করেই নেকবর হোসেন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই নিজ ক্ষমতাবলে জমি দখল করে জমি চাষ দেন। 

বিষয়টি জানতে পেরে মিল কর্তৃপক্ষ জমি চাষে বাধা দেয় এবং ৩ ডিসেম্বর নেকবরের ৩০ একর জমির লিজ বাতিল করে। এর প্রতিবাদে কৃষ্ণা খামারে অনিয়ম দূর্নতির অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার খামার এলাকায় প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন নেকবর হোসেন।

এসময় তিনি বক্তব্যে কৃষ্ণা খামারের নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ এনে ইনচার্জ খায়রুল ইসলাম ও নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খবির উদ্দিন মোল্যাকে অপসারণ সহ ৩০ একর জমি লিজ পুনর্বহালের দাবি জানান। এই ঘটনার জেরে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা লালপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। 

এদিকে লিজ প্রক্রিয়াসহ পুরো বিষয়টি নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, দোষারোপ ও অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। মিল কর্তৃপক্ষ ও চাষীরা জানান, রবিবার (৮ ডিসেম্বর) জমির লিজ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে পুনরায় কোটেশন আহ্বান করা হবে। অন্যদিকে একই দিন দাবি মানা না হলে মিল গেট এলাকায় চাষীদের পক্ষ থেকে কর্মসূচী পালনের কথা রয়েছে। 

মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, চাষীদের অবস্থান ও কর্মসূচী বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। নিজ স্বার্থ হাসিল করতে নেকবর হোসেন মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন।

লিজ প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম নয় বরং লিজ প্রক্রিয়ায় নিয়ম অমান্য করে জমি দখল করে জমি চাষ দেওয়ায় ৩০ একর জমির লিজ বাতিল করা হয়েছে। সঠিক নিয়ম মেনে লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করলে নেকবর হোসেন জমি লিজ পেতে পারেন।

মিল বর্তমান সময়ে লাভজনক অবস্থায় রয়েছে। মিলকে আরো লাভজনক করতে মিল কর্তৃপক্ষ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নানা উদ্যেগ গ্রহণ করেছে ও কাজ করে যাচ্ছে। নিয়ম অমান্য করে কাউকে জমি লিজ দেওয়া হবে না। লিজ প্রক্রিয়ায় কোটেশন আহ্বান, যাচাই-বাছাই, অফার লেটার ও ওয়ার্ক অর্ডার সংগ্রহ ইত্যাদি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই একজন চাষী জমি লিজ নিতে পারেন। এই নিয়ম অম্যান্যকারী চাষীকে মিল কেন জমি লিজ দিতে যাবে। প্রয়োজনে মিল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খামারের জমি চাষাবাদ করবে।

অন্যদিকে, বিএনপি নেতা ও চাষী নেকবর হোসেন এবং স্থানীয় চাষীদের অভিযোগ, মিলে একটি সক্রিয় মাফিয়া চক্র টাকা ছাড়া কাজ করে না। লিজ পেতে টাকা অফার করতে হয়। যারা টাকা দিতে পারে তারা জমি লিজ পায়। মিল কর্তৃপক্ষ যাকে খুশি তাকে জমি লিজ দিতে পারে। কিন্তু কোন অনিয়ম-দূনীতি মেনে নেওয়া হবে না।


উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও লিজ গ্রহীতা নেকবর হোসেন জানান, আমরা ৩০ একর জমি লিজ নিতে কোটেশনে অংশ নিই। লিজ প্রদানও করা হয়। কিন্তু সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই একটি জমি চাষ দেওয়ার অপরাধে এবং মাফিয়া চক্রের দাবি কৃত টুপাইস (ঘুষ) না দেওয়ায় লিজ বাতিল করা হয়েছে। অনিয়মের মাধ্যমে যারা শতশত বিঘা জমি চাষ করছে তাদের জমির লিজ কেন বাতিল করা হচ্ছে না বলেও প্রশ্ন ছোড়েন তিনি। 

তিনি আরো জানান, ইচ্ছেমত অনিয়মের মাধ্যমে খামারে যাকে তাকে ঢোকানো হয়। খামারের বৃক্ষরোপন প্রকল্পে ব্যাপক পরিমাণ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। এগুলো দেখার কেউ নাই। তিনি বলেন, মাফিয়া চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করে খামার প্রকল্প এলাকায় যারা সাধারণ বর্গাচাষী আছেন তাদেরকে কিছু কিছু জমি লিজ দেওয়া হোক। মিল কর্তৃপক্ষ যাকে খুশি তাকে জমি দিতে পারে। আমার আপত্তি নাই। কিন্তু মিল থেকে অনিয়ম, দূর্নীতি দূর করতে হবে।


নর্থ বেঙ্গল চিনি কলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ খবির উদ্দিন মোল্যা জানান, নেকবর হোসেন আমাদের সম্পর্কে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছেন। তিনি জমির লিজের বিষয়ে কোন নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে, মিল কর্তৃপক্ষের কোন অফার লেটার, কার্যাদেশ না পেয়েই নিজ ক্ষমতাবলে জমি চাষ করেছেন। বিষয়টি জানার পরে তাকে বাধা দেওয়া হয়, লিজ বাতিল এবং প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।

মিলের নিজস্ব তত্ত্বাবধানে মিলের জমি চাষ করার পাশাপাশি জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে উবৃদ্ধভাবে স্বল্পমেয়াদে মিলের কিছু জমি নিয়ম নীতি অনুসরণ করে লিজ দেওয়া হয়। নিয়ম নীতি মেনে বেশি সংখ্যক চাষীর অংশ গ্রহণে লিজ প্রদান করে মিল যাতে তার অর্থ পায় সেভাবেই আমরা লিজ দেবো। নতুবা মিল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই মিলের জমি চাষ করবে। ব্যাপক কোটেশন সংগ্রহ করে যিনি সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হবেন তিনিই জমি লিজ পাবেন।

লালপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ নুরুজ্জামান জানান, নানা হুমকি ধামকির বিষয়ে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খবির উদ্দিন মোল্যার পক্ষ থেকে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এছাড়া যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শহীদ

×