.
অগ্রহায়ণের শেষে পৌষের আগমনে সারাদেশে বাড়তে শুরু করেছে শীতের তীব্রতা। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে হেমন্তের শেষভাগে এসে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশা শীতের অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে। সূর্যের দেখা মিললেও ঠান্ডা থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। ঠাকুরগাঁওয়ে কুয়াশায় ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
লালমনিরহাটে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকায় সূর্য দুপুরের পর সামান্য উঁকি দিলেও তেমন উষ্ণতা ছড়াতে পারছে না। গত দুদিন কুয়াশা বেশি মাত্রায় পড়ায় মহাসড়কে যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। হাসপাতালগুলোতে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শনিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা যায় ঘন কুয়াশায় ঢাকা চারদিক। অতিরিক্ত কুয়াশায় খেটেখাওয়া মানুষজন কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছে না। বিশেষ করে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে বেশি বিপাকে পড়তে দেখা গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, কয়েকদিনের মধ্যে ঠান্ডার দাপট আরও বেড়ে যাবে। জেলার পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। নিউমোনিয়া, সর্দি, কাশি, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ নিয়ে ভর্তি হচ্ছে রোগীরা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষক সুজিত কুমার জানান, রবি মৌসুম চলছে। আলু, পেঁয়াজ, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি খেতে কাজ করতে হয়। তীব্র শীতে মাঠে যাওয়া যাচ্ছে না। এতে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। কালিগঞ্জ উপজেলার দুহুলী এলাকার রিক্সাচালক নির্মল চন্দ্র বলেন, গত দুদিন থেকে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েছে। পাশাপাশি ঠান্ডাও বাড়ছে। কুয়াশার কারণে যাত্রীর সংখ্যাও কম। আগামীতে শীতের কারণে যাত্রী সংখ্যা আরও কমে যাবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার বলেন, প্রতিবছর এই এলাকায় শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।
নীলফামারী ॥ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীসহ অন্যান্য জেলায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের তিস্তা নদী বিধৌত এলাকায় শনিবার তাপমাত্রা কমেছে। এদিন তিস্তা নদীর ডিমলা, জলঢাকা, হাতীবান্ধা, পাটগ্রাম, কালীগঞ্জ উপজেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৩ দশমিক ৩ ও সর্বনি¤œ ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। যা শুক্রবারের চেয়ে সর্বোচ্চ ৩ ডিগ্রি ও সর্বনি¤œ ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। এতে তিস্তাপাড়ে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান ডিমলা আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা আব্দুর সবুর মিয়া।
তিস্তাপাড়ের চরখড়িবাড়ি গ্রামের ইসমাইল হোসেন জানান, শীত হু হু করে বাড়ছে। সারাদিন কনকনে ঠান্ডা বাতাস বইছে। সাধারণ খেটেখাওয়া মানুষের চলাফেরা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। শীতে বেড়েছে অ্যাজমা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এসব সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ছুটে যাচ্ছেন। একটি বেসরকারি সংস্থা সূত্রে জানা যায়, নীলফামারী জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলায় তিস্তার চর রয়েছে ২২টি ও লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলায় ৬৩টি চর রয়েছে। তিস্তা নদীরপাড়ের অসহায় মানুষগুলোর শীতবস্ত্রের অভাব রয়েছে। তাদের দেখা যায় খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করতে।
ডিমলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান, খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান, তিস্তাপাড়ের জন্য শীতবস্ত্রের বিশেষ প্রয়োজন। দিন দিন শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় চরবাসীর দুর্ভোগ বেড়েছে।
এদিকে, আবহাওয়া অফিস মতে, শনিবার উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫, দিনাজপুরে ১০ দশমিক ১, সৈয়দপুরে ১১ দশমিক ২, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২ দশমিক ৫ ও রংপুর বিভাগীয় শহরে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ জেলার বদলগাছিতে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঠাকুরগাঁও ॥ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইতে শুরু করায় ঠাকুরগাঁওয়ে জেঁকে বসেছে শীত। দিনভর কুয়াশায় ঢেকে থাকায় সর্বত্র বিরাজ করছে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। শনিবার দুপুরে কিছু সময়ের জন্য সূর্য দেখা গেলেও প্রায় সারাদিন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল চারদিক। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষ। কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলোকে অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শীতে রিক্সা ও অটোচালকদের জীবনযাত্রা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তারা বলছেন, ঠান্ডায় মানুষ রিক্সায় উঠতে চায় না। এ কারণে তাদের রোজগারও কমে গেছে।
ঠান্ডায় শিশু ও বৃদ্ধরা সর্দি-কাশিসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে আসন সংখ্যার ৩-৪ গুণ বেশি রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ সাজ্জাদ হায়দার শাহীন জানান, হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে আসা রোগীর ৭০ শতাংশই শিশু। এসব শিশুর প্রতি বিশেষ যতœ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকদের।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় আবহাওয়া অফিস না থাকায় চাষীরা আকাশের দিকে তাকিয়ে অবস্থা নিরূপণ করেন। অনেক সময় ধারণা ভুল হওয়ায় চাষীরা ফসল নিয়ে বিপদে পড়েন। তাই আবহাওয়ার সঠিক অবস্থা জানতে জেলায় একটি আবহাওয়া অফিস স্থাপন এখন সময়ের দাবি।
শীত মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, জেলার হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে ৫০ হাজার কম্বল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।