ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬ মাঘ ১৪৩১

পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত

লক্ষ্মীপুরে শ্লীলতা হানির অভিযোগ বিদ্যা নিকেতন শিক্ষক লিটনের বিরুদ্ধে

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপর, ৬ ডিসেম্বর

প্রকাশিত: ১৭:৫৯, ৬ ডিসেম্বর ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে শ্লীলতা হানির অভিযোগ বিদ্যা নিকেতন শিক্ষক লিটনের বিরুদ্ধে

শ্লীলতা হানির অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপর বালিকা বিদ্যা নিকেতনের সহকারী প্রধান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথের বিরুদ্ধে। লিটন ইতিপূর্বেও ওই বিদ্যালয়ের আয়া নিগার সুলতান কে জড়িয়ে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে শ্লীলতা হানির চেষ্টা করেছেন। তিনি ছাত্রীদেরকে বিভিন্ন অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। নচেৎ পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেয়ার ভয় দেখাচ্ছেন। ছাত্রীদের পাঠদানের পরিবর্তে প্রেমের প্র্যাকটিজ শেখানো হচ্ছে বিদ্যালয়ে। যার ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পরীক্ষার  ফলাফলও সন্তোষজনক নয় বিদ্যালয়টির। তাঁর স্বেচ্ছাচারিতার ভয়ে অন্যরা মুখ খূলতে ভয় পাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় শিক্ষার্থী-শিক্ষক, অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসী তার অপসারণ দাবী করছেন।

এ নিয়ে লিটনের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও অপসারণের দাবিতে জেলা শিক্ষা অফিসার ও  জেলা প্রশাসকের বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফরিদা ইয়াছমিন। লিটন ইতিপূর্বেও ওই বিদ্যালয়ের আয়া নিগার সুলতান কে জড়িয়ে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিয়ে শ্লীলতা হানি ঘটায়। এ ব্যাপারে নিগার সুলতানা সদর মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পরে প্রাক্তন সভাপতি স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। এ নিয়ে ভাড়াভাড়ি করলে তাকে চাকুরিচ্যুত করার হুমকি দেন তিনি। ওই সময় প্রতিষ্ঠানটির আয়া কাঁদতে কাঁদতে বিদ্যালয় থেকে বেড়িয়ে স্থানীয়দের ঘটনা খুলে বলেন।
অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, লিটন চন্দ্র দেবনাথ দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ফরিদা ইয়াসমিনকে বিভিন্ন সময়ে তাকে সময় দেয়ার কু-প্রস্তাব অর্থাৎ তাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সময় দেয়ার জন্য বলে আসছেন। এতে রাজি না হওয়ায় শিক্ষক হাজিরা খাতায় তাকে স্বাক্ষর না দিয়ে অনুপস্থিতি  দেখান। এ ছাড়াও অপর ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনও তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন বলে লিখিত অভিযোগ করা হয়প্রয়োজনে টাকা দেয়া হবে। এতে রাজি না হওয়ায় তার ওপর চলে নানান মানুষিক নির্যাতন। প্রায়শঃ তিনি শ্রেণি কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার পরেও তাকে অনুপস্থিতি দেখিয়েছেন। ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের নানান প্রস্তাব বা সময় দেযার ব্যাপারে।  এ বিষয়ে সদর উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মাকসুদুল আলম বিষয়টি অবগত আছেন বলে জানান শিক্ষক ফরিদা ইয়াছমিন। অভিযোগ রয়েছে সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন চন্দ্র দেবনাথ তার নিয়োগের পর থেকে বিদ্যালয়ে সুদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
এ নিয়ে এলাকার লোকজন প্রতিনিয়ত হাতে স্ট্যাম্প ও চেকের কাগজপত্র নিয়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা সুদের টাকা গ্রহনে গৃহিতাদের বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ভিড় করতে দেখা যায় বলে অভিযোগ করেছেন। লেনদেন নিয়ে গৃহীতাদের সাথে বিদ্যালয়ে উচ্চ স্বরে কথা বলতে শুনা যায়। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ দানে বিঘ্ন ঘটছে বলে অভিযোগ করেছেন বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি (এড. নূরউদ্দিন চৌধুরীকে) (কোড-আনকোড) কে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে এ সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে লিটন লিটনের বিরুদ্ধে।
তার অসদাচণে শিক্ষক শিক্ষার্থী ও কর্মীচারীরা রয়েছেন চরম অসন্তুষ্ট। এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকসহ এলাকাবাসী। এমন কি কোনো শিক্ষার্থীর মাকেও তার সাথে দেখা করে সময় দেয়ার জন্য প্রস্তাব লিটনের। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নামাজের ঘরের বাইরে তালা দিয়ে নামাজ পড়তে বাধাগ্রস্থ করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েক শিক্ষার্থী জানান, বিদ্যালয়ের বিরতির সময়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন এবং তাকে সময় দেয়ার জন্য প্রস্তাব নেন। নচেৎ তিনি পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেবেন। এসব অভিযোগ ছাত্রী এবং অভিভাবকদের। অভিভাবকরা জানান, আমাদের মেয়েদের লেখা পড়া করাতে সেখানে দিয়েছি। প্রেম প্রেম খেলার জন্য মেয়েদের দেই নাই। শিক্ষক যদি এ আচরন করেন তা হলে হলে ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কী ?  এ ছাড়া ছাত্রীদের ব্যক্তিগত বিষয়েও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ে আপত্তিকর আচরণ করেন। তার সাথে গাড়ীতে ঘুরার প্রস্তাব দেন। তাকে মহিলা শিক্ষক থাকার পরে তাকে তার ব্যক্তিগত শারীরিক বিষয়গুলো জানাবার তাগিদ ছাত্রীদের। এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের।
তার অনিয়মের বাধাঁ ও প্রতিবাদ করায় তিনি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যোগসাজসে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (বিএনপি সমর্থিত অভিযোগ এনে) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনকে বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা অভিযোগ এনে চাকুরীচ্যুত করার চেষ্টা করেন। এরমাঝে তিনি ফন্দি ফিকির করে প্রধান শিক্ষক পদটি ভাগিয়ে নেয়ার পায়তারা করছেন বলে অভিযোগ।
    একই বিদ্যালয়ের আয়া নিগার সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, তিনি ১৪ নভেম্বর বিদ্যালয়ের নামাজ ঘরে একা নামাজ পড়ছিলেন। এ সময় সহকারী প্রধান শিক্ষক লিটন তার গায়ে হাত দেয় এবং তার অনৈতিক কাজের উদ্ধেশ্যে ধস্তাধস্তি করেন। তিনি বিদ্যালয়ে চাকুরী করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। এ সব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে জানানোর পর তাকে চাকুরীচ্যুত করার হুমকি দিচ্ছেন। এ সব বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে সহকারী প্রধাণ শিক্ষক লিটন তিনি সবই মিথ্যে বলে এড়িয়ে যান।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষক ও কর্মচারীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। বিষয়টি তদন্তকরে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি সম্্রাট খীসাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষে রিপোর্ট পেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
শ্লীলতা হানির অভিযোগ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি, উন্নয়ন ও মানব সম্পদ) সম্রাট খীসা বলেন,এ বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

 

×