ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫ মাঘ ১৪৩১

বান্দরবানে বাস টার্মিনাল নির্মাণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান

প্রকাশিত: ১৬:৫৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪; আপডেট: ১৮:৩০, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

বান্দরবানে বাস টার্মিনাল নির্মাণে অনিয়ম

বাস টার্মিনাল নির্মানে অনিয়ম

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে হাফেজঘোনায় পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব কাটিয়ে এলজিইডি, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকার উন্নয়ন কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান জেলা শহরের হাফেজঘোনা এলাকার পৌর বাস টার্মিনালটি নির্মাণ কাজের শুরু থেকেই জেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি উজ্জ্বল কান্তি দাশ সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে জোকসাজসে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের তত্ত্বাবধানে নির্মানাধীন এ বাস স্টেশনটির মাটি ভরাট, ভবন নির্মাণ, গাড়ি পার্কিং,পর্যটকদের জন্য রেস্টরুম ও পাবলিক টয়লেট নির্মাণের শুরু থেকেই বিভিন্ন নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছে।


উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, পৌর বাস টর্মিনাল নির্মাণে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড থেকে বিগত ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গাজুড়ে বাস টার্মিনালটির কার্যাদেশ পায় স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএম ট্রেডার্স। কাজটি বাস্তবায়ন করছেন বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি উজ্জল কান্তি দাশ।

তিনি প্রকৌশলী সঙ্গে আঁতাত করে ইতিমধ্যে প্রকল্পটির বরাদ্দ কৃত টাকার প্রায় ৮০ শতাংশ টাকা তুলে নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে এ কাজের ধাপে ধাপে মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ২০২৫ সালের জুন মাসে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।


অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৭ সালে বান্দরবান সরকারি মহিলা কলেজের চার তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের ড্রপওয়াল নির্মাণ কাজে রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি ব্যবহার করেন এ আওয়ামীগ নেতা। এভাবে প্রায় ২০০ ফুটেরও বেশি আরসিসি ঢালাইয়ে বাঁশ ব্যবহার করার সংবাদ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হলে আলোচনায় আসেন তিনি।

পরবর্তী ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল সাক্ষ্যপ্রমান ও এলজিইডির প্রকৌশলীদের তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইউএন এন্টারপ্রাইজের মালিক ক্যহ্লা মং মারমা ও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী ঠিকাদার উজ্জ্বল কান্তি দাশের ভাগিনা তাপস কান্তি দাশকে অভিযুক্ত করে ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর একটি মামলা দায়ের করেন তৎকালীন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন। ওই মামলায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ওই সময়ের পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এর সহযোগিতায় উজ্জ্বল কান্তি দাশের নাম বাদ দিয়ে তার ভাগিনা তাপস কান্তি দাশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল বলে জানা গেছে।


বান্দরবান মেম্বর পাড়ার বাসিন্দা মিজানুর রহমান ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক পৌর কাউন্সিলর কামরুল ইসলাম বাচ্চু জানান, দীর্ঘদিন ধরে বাস টার্মিনালটির নির্মাণ কাজ চলছে। তবে গত ৪ বছরে ৫০ শতাংশ কাজও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। অনিয়ম ছাড়াও কাজটির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীদের।


অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করে জেলা আওয়ামীলীগ সহসভাপতি উজ্জ্বল কান্তি দাশ মুঠোফোনে বলেন, বাস টার্মিনালটির জায়গা সমস্যা নিয়ে চার বছর সময় চলে গেছে। জায়গা বুঝে পাওয়ার পর গাইডওয়াল নির্মাণ করতে হয়েছে। পরে ইট না থাকায় সলিং করা সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে বান্দরবান জেলার বাহিরে থেকে ইট আনতে হচ্ছে এবং কাজটি দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মোহাম্মদ ইয়াছির আরাফাত দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, পৌর বাস টার্মিনালটি নির্মানে একটু ধীরগতি হলেও অনিয়ম বা দুর্নীতির কোন সুযোগ নেই। কাজটি আমি নিজেই দেখাশোনা করছি। আগামী ২৫ সালের মধ্যে বাস টার্মিনাল নির্মানের কাজ কাজ শেষ ওয়ার কথা রয়েছে। তবে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে অফিস থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শহীদ

×