ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

কবর থেকে তোলা মরদেহের ডিএনএ পরিবারের সঙ্গে মিলেছে

সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী

হারিছ চৌধুরী

সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই বিএনপি নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী। কবর থেকে তোলা মরদেহের ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট তার পরিবারের সঙ্গে মিলেছে। এখন পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করা যাবে। বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

পরে আদালতের আদেশে বলা হয়, এখন পরিবারের পছন্দমতো কবরস্থানে হারিছ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করা যাবে। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মাহদীন চৌধুরী। পরে আইনজীবী মাহদীন চৌধুরী জানান, ছদ্মবেশে থাকা সেই মাহমুদুর রহমানই হারিছ চৌধুরী। ডিএনএ টেস্টে তা প্রমাণিত। হারিছ চৌধুরীর মরদেহ বর্তমানে ঢাকা মেডিক্যালের মর্গে রাখা হয়েছে। সেখান থেকে সিলেটের কানাইঘাটে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। এর আগে গত ৫ সেপ্টেম্বর তার মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিনের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ আবুল হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নির্ধারণে কবর থেকে তুলে ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দেন।

পরে আদালতের নির্দেশে গত ১৬ অক্টোবর বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কামালপুর এলাকার ‘জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন’ কবরস্থান থেকে উত্তোলন করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। পরে তার মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। 
এদিকে সেদিন সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আহম্মেদ মুঈদ, সাভার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এস এম রাসেল ইসলাম নুরসহ প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়।  
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপির সাবেক নেতা আবুল হারিছ চৌধুরী ‘মাহমুদুর রহমান’ পরিচয়ে ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কামালপুর এলাকার ‘জামিনে খাতামুন নবীঈনের জামিয়া খাতামুন’ কবরস্থানে দাফন করা হয়।
হারিছ চৌধুরীর মেয়ে জানান, সদ্য বিদায়ী  স্বৈরাচারী সরকার ওদের গোয়েন্দা বিভাগ একটা নাটক রচনা করে বাবার মৃত্যুকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। 
তিনি জানান, মিডিয়া একটার পর একটা রিপোর্ট করেছে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে, ধোঁয়াশা কাটছে না। এটা নিয়ে যেন কখনো প্রশ্ন না ওঠে সেটা নিশ্চিত করার জন্য এ রিট করেছি। আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থাকবে সন্তান হিসেবে এটা খুব মর্মান্তিক, কষ্টদায়ক। এখনো মানুষ জিজ্ঞেস করে সত্যিই কি তিনি মারা গেছেন! আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তাই এটা শেষ করতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। আদালত নিরাশ করেননি। সাভারের জামিয়া খাতামুন নাবিয়্যিন মাদ্রাসার কবরস্থানে মাহমুদুর রহমান নামে কবর দেওয়া হয় আবুল হারিছ চৌধুরীকে।
ডিএনএ টেস্ট করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না এবং ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসার পর আবুল হারিছ চৌধুরীর নামে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে না ও তার নামে থাকা ইন্টারপোল রেড নোটিস কেন প্রত্যাহার করা হবে না, তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দিয়ে কেনো কবরস্থ করা হবে না মর্মে রুল জারি করা হয়। স্বরাষ্ট্র সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু), সিআইডির পরিচালক, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার ও সাভার মডেল থানার ওসিকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারির পর হারিছ চৌধুরী সস্ত্রীক তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার দর্পণগরে যান। রাত ১২টার পর তার ব্যক্তিগত সহকারী আতিক মোবাইল ফোনে জানান, ঢাকায় বিএনপি নেতাদের বাসভবনে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। কয়েক ঘণ্টা পর যৌথ বাহিনী হারিছের বাড়িতে হানা দেয়। কিন্তু তার আগেই তিনি সটকে পড়েছিলেন। কিছুদিন সিলেটে এখানে-ওখানে লুকিয়ে থাকার পর ওই বছরের ২৯ জানুয়ারি জকিগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে রাতের আঁধারে ভারতে চলে যান। ভারতের অসমের করিমগঞ্জ জেলার বদরপুরে তার নানাবাড়ি যান। সেখান থেকেই বিদেশে যাতায়াত করতেন। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী জানান, এক-এগারোর পর তার বাবা আত্মগোপনে চলে যান। তিনি দেশ ছেড়ে যাননি।

×