চট্টগ্রামের ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, জনগণের মন জয় করতে হবে। জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করবেন না। অতীতের যে কোনো নির্বাচনের চেয়ে ভবিষ্যতের নির্বাচন কঠিন হবে। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। অনেক অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকে উপড়ে ফেলতে হলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। বিএনপি বিশ্বাস করে ক্ষমতার উৎস জনগণ। তারা সেই জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চায়। গত ৫ আগস্টের পর আমাদের অনেকের মাঝে ধারণা এসেছে আমরা বোধ হয় সরকার গঠন করে ফেলেছি। আসলে আমরা বিরোধী দলই আছি।
বুধবার বিকেলে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ শীর্ষক এ কর্মশালা চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজন করা হয়। সেখানে বিভাগের ১০ সাংগঠনিক জেলার নেতারা অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, এ কর্মশালা দলের পক্ষ থেকে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য আগামীদিনের যে পরিকল্পনা নিয়েছি তা জানার জন্য এবং শিখে নিয়ে যাওয়ার জন্য। চট্টগ্রাম বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ৫১৫ জন উপস্থিত থাকার কথা ছিল, কিন্তু উপস্থিত হয়েছে ৮৫৯ জন। যতগুলো বিভাগের অনুষ্ঠান করেছি, তারমধ্যে চট্টগ্রামই একমাত্র বিভাগ যেখানে নেতাকর্মীর উপস্থিতি বেশি হয়েছে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সেই চট্টগ্রাম, যেখান থেকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছিল চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের মাটিতে আমাদের ৩১ দফা তুলে ধরেছি আপনাদের মাঝে।
নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি বলেন, এটি ছিল প্রথমে ২৭ দফা। পরবর্তীতে হয়েছে ৩১ দফা। বাংলাদেশে প্রো-ডেমোক্র্যাসি যেসব দল আছে- পলাতক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে যেসব দল ছিল সেসব দলের মতামতের ভিত্তিতে আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা মোটামুটিভাবে সকল গণতান্ত্রিক দলের পক্ষ থেকে উপস্থাপন করা হয়েছে। যার ভেতরে কমবেশি মোটামুটিভাবে দেশের এবং আগামী দিনের দেশ পরিচালনা, লক্ষ্য উদ্দেশ্য কমবেশি আছে।
৩১ দফা কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ নয় উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এটাতে অবশ্যই পরিবর্তন করা যাবে। কারও যদি কিছু প্রস্তাব থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা গ্রহণ করব। এ ৩১ দফা শুধু নেতাকর্মীদের মধ্যে রেখে দিলে লক্ষ্য বাস্তবায়িত হবে না। এটি জানানোর কারণ হলো- আমরা দেশ ও মানুষের জন্য ভালো কিছু করতে চাই। এ কথাগুলো পৌঁছে দিতে হবে। বিএনপি দেশ পরিচালনা করতে চায় জনগণের সমর্থন নিয়ে। অতীতে আমরা শুনেছিলাম- একটি দলের একজন নেতা ভারত থেকে এসে বলেছিল, আমরা তাদেরকে অনুরোধ করেছিলাম যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় রাখতে।
বিএনপি এসব বিশ্বাস করে না। বিএনপি বিশ্বাস করে ক্ষমতার উৎস জনগণ, সেই জনগণের সমর্থন নিয়ে দেশ পরিচালনা করতে চায়। জনগণের দুয়ারে যেতে চায়, জনগণকে বলতে চাই- দয়া করে দেশ পরিচালানার সুযোগ দিন। জেলার নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এখন ৩১ দফা উপজেলা, ওয়ার্ড ও থানা পর্যায়ে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। নির্বাচনের সময় যখন পাড়া-মহল্লায় গিয়ে নেতাকর্মীরা যে লিফলেট দিতেন ঠিক সেইভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করে ৩১ দফা পৌঁছে দিতে হবে। মানুষের দ্বারে দ্বারে নিয়ে যেতে হবে এ ৩১ দফা।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের কিছু কিছু সহকর্মীর মনে ৫ আগস্টের পর একটি অদ্ভুত নতুন অনুভূতি এসেছে- মনে হচ্ছে আমরা বোধ হয় সরকার গঠন করে ফেলেছি। আমরা সরকার গঠন করিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বিরোধী দলই আছি। বিরোধী দলেই অবস্থান করছি। আমরা সরকারি দলে নেই, সরকারে নেই। যেসব সহকর্মী ভুল উপলব্ধি করছেন তাদের বিভিন্ন আচরণের জন্য, বিভিন্ন জায়গায় দল ও দলের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এরমধ্যে চট্টগ্রামে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কেন এমন কিছু করবেন যাতে বিএনপি ও দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে? নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এলাকার মানুষ আপনারই স্বজন। কয়েকদিন পর ভোট হলে তখন তো ধানের শীষের পক্ষে ভোট করতে যাবেন, কোন মুখে ভোট চাইবেন? আজকে যদি বিতর্কিত কথা ও কাজ করে থাকেন তখন সে উল্টা অপমান করবে। তখন বলবে ‘কোন মুখে ভোট চাইতে এসেছো’?
আমরা ডামি নির্বাচন বিশ্বাস করি না, নিশিরাতের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, আমরা ব্যালট চুরির নির্বাচন বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি জনগণ লাইনে দাঁড়িয়ে নিরাপদে, নিরাপত্তার সঙ্গে, স্বচ্ছ ও স্বাধীন এবং ভয়হীনভাবে ভোট দেবে। আমরা সেই নীতিতে বিশ্বাস করি। সেটি অর্জন করতে হলে আপনাদের (নেতাকর্মী) অনেক কিছু পরিবর্তন করতে হবে। আপনাদের উঠা-বসা, চলাফেরা ও কথাবার্তা পরিবর্তন করতে হবে। বারবার বলছি- জনগণকে সঙ্গে রাখুন, জনগণের সঙ্গে থাকুন। আপনারা ক্ষমতায় যাবেন না, মানুষের সমর্থন পেলে দেশ পরিচালনার সুযোগ পাবেন। মানুষ আপনাদের ক্ষমতা দেবে না, আপনাদের দেশ পরিচালনার সুযোগ দেবে।
দুটোর মধ্যে পার্থক্য আছে। ক্ষমতায় ছিল পলাতক স্বৈরাচার। ক্ষমতা ছাড়া কিচ্ছু বুঝত না বলেই দেশের মানুষের জন্য কোনো কাজ করেনি। তারা ক্ষমতায় ছিল, জন সমর্থনে দেশ পরিচালনার সুযোগ পায় নাই। ক্ষমতা দখল করে ক্ষমতায় ছিল। আমরা দেশ পরিচালনার সুযোগ পেতে চাই, জনগণের সমর্থন পেয়ে। দেশ পরিচালনা করতে চাইলে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। নিজের প্রতি মানুষের সমর্থন ও আস্থা অর্জন করতে হবে। আস্থা অর্জন করতে হলে- নিজেদের ধীরস্থির করতে হবে। উপলব্ধি আনতে হবে। কথাবার্তা ও চলন-বলনে পরিবর্তন আনতে হবে।
বিএনপির প্রতি মানুষের আস্থা আছে আপনারাই বলেন। এই আস্থা ধরে রাখতে হবে। এটি ধরে রাখতে না পারলে ভোট পাবেন না। কোনোভাবেই ভোট পাবেন না। ভোট কি হবে তা ভোটার ঠিক করবে, সে কাকে ভোট দেবে। এ আস্থা ধরে রাখার দায়িত্ব পাবলিকের না, আস্থা ধরে রাখতে হবে আপনাদের।
নোয়াখালী অঞ্চলে নেতাকর্মীরা বন্যায় দিনরাত পরিশ্রম করেছেন জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শুধু বন্যার সময় না, বন্যা পরবর্তীও কাজ করেছেন মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্য। ঠিক একইভাবে ভোট যতক্ষণ না হচ্ছে আস্থা ধরে রাখতে হবে। ভোটে জিতলে তখন আপনাকে কাজ করতে হবে ৩১ দফা বাস্তবায়নে। এসব ব্যাপার ছোট-খাটো না। অনেক সিরিয়াস ব্যাপার, রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত খুবই সিরিয়াস ম্যাটার। সকলের ধৈর্য এক রকম হয় না। কারও মাথা গরম, কারও মাথা ঠান্ডা।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকে। আমরা সহকর্মী। আমরা সকলে মিলে দল। আমাদের প্রত্যেককে প্রত্যেকের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। দলের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। যদি দলের প্রতি খেয়াল রাখতে পারি তাহলে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হব। ৩১ দফার জন্য এ কর্মশালা। এ কর্মশালায় আমরা শপথ গ্রহণ করি যে, জনগণের আস্থা নষ্ট হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে আমরা নিজেদের বিরত রাখব। আস্থা অর্জন করতে কাজ করব।
তারেক রহমান বলেন, কেউ যদি ভেবে থাকি যে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, যাকে আমরা ভাবতাম তারা মাঠে এখন দুর্বল; তারা নেই, তাহলে সবকিছু সোজা আমরা চলে যাব, আল্লাহর ওয়াস্তে এ কথাটি মন থেকে সরিয়ে ফেলুন। আগামী নির্বাচন কিন্তু অনেক কঠিন। যদি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মাঠে থাকতে পারত, সেক্ষেত্রে নির্বাচন যতটুকু কঠিন হতো তার চেয়ে আরও কঠিন। এখানে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। অনেক অদৃশ্য শক্তি আপনার বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিএনপি তথা আপনার বিরুদ্ধে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে।
ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন। ছাত্রদল হন, যুবদল যেই হন না কেন এগুলো চিন্তা করুন। বহু ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রকে উপরে ফেলতে হলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। বিগত ১৫-১৬ বছর অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন, আমাদের সামান্য ছোট ছোট ভুলের কারণে যাতে বিসর্জনগুলো নষ্ট হয়ে না যায়। আমাদের বিরুদ্ধে অনেক মিথ্যা মামলা আছে। যে বিসর্জন দিয়েছেন, সেগুলো যাতে নষ্ট হয়ে না যায়, এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। মানুষের আস্থা ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার তা করতে হবে। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি, থাকব। জনগণই আমাদের শেষ ভরসা। কর্মশালায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তারেক রহমান।