এবার চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ দোকানেই শীতের কাপড়ের স্টক প্রচুর কিন্তু ক্রেতা নেই।বিক্রেতারা বলছেন, এখনও কনকনে শীত না পড়ায় গরম কাপড়ের বাজার ঠান্ডা হয়ে আছে। শীত বাড়লেই গরম কাপড়ের বাজার গরম হয়ে উঠবে।নীলফামারী সহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলায় তাপমাত্রা গত এক সপ্তাহ জুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রি ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে রয়েছে। ফলে সন্ধ্যার পর শীত আর দিনের বেলায় গরম। আবহাওয়া অফিস সুত্রমতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলনিয়াসের ঘরে নামলেই কনকনে শীত শুরু হবে। বুধবার উত্তরাঞ্চলের সর্ববৃহৎ নীলফামারীর বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুরে শীতের কাপড়ের পাইকারী বা খুচরা বেচাকেনা এলাকা ঘুরে দেখা যায় এখনও ঠিকমতো জমজমাট হয়ে এখনও উঠেনি। এই শহরে এ অঞ্চলের জেলা ও উপজেলাগুলো থেকে ব্যবসায়ীরা পাইকারী দরে গরম কাপড় ক্রয় করে নিয়ে যায়। শীত আগমনের আগেই সৈয়দপুরের পাইকারি পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীরা শীতবস্ত্র মজুদ করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে তারা সংগ্রহ করেন পুরাতন শীত কাপড়ের বেল। পরে এসব দোকান থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ উত্তরের অন্য জেলার পাইকাররা খোলা ও বেল হিসাবে ক্রয় করে থাকেন। ফলে এ ব্যবসা অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে চলে জানুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত। এতে করে শীত মৌসুমে সৈয়দপুর পুরাতন কাপড়ের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসার বড় মোকামে পরিণত হয়েছে। সৈয়দপুর বস্ত্র মালিক সমিতির আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক জানান, সৈয়দপুরের ছয়জন ব্যবসায়ী শীতবস্ত্র আমদানি-রপ্তানি করেন। অন্যরা চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে পাইকারি কেনেন। তারা স্থানীয় ও উত্তরের অন্য জেলায় খুচরা ও পাইকারি হিসাবে কেনাবেচা করেন। এবার তাদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। তবে কনকনে শীত পড়লেই বেচাকেনা বেড়ে যাবে।পুরাতন কাপড় ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে জ্যাকেটের বেল পাইকারি বিক্রি হয় ৮ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এছাড়া কার্ডিগান ৬ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা, হুডি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা, মাফলার ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা, টুপি দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা ও কম্বল বিক্রি হয় ১২ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকায়। বেলভেদে ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা লাভ করেন পাইকাররা। এ শীতে এবার শত কোটি টাকার ব্যবসা হবে বলে আশা করছেন তারা। কাপড় ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ক্লথ স্টোরের মালিক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, গাইডের কাপড় তাইওয়ান, জাপান ও কোরিয়া থেকে বেশি আসে। চট্টগ্রাম থেকে এসব কিনে স্বল্প লাভে বিক্রি করি। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা বাকি ও নগদে কিনে নেন। দুই বছর করোনার কারণে লাভের মুখ দেখিনি। এবার লাভের আশা করছি আমরা। মৌসুমী খুচরা কাপড় ব্যবসায়ী আকতার হোসেন বলেন, শীতের সময়ে শীতবস্ত্র বিক্রি করে বাড়তি আয় হয়। অন্য সময় হোটেলে কাজ করি এবং রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। শীতে মহাজনের কাছ থেকে শীতবস্ত্র নিয়ে রেললাইনের পাশে বিক্রি করি। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলে যায়। বাড়ি ভাড়া ও দোকানের বাকিও পরিশোধ হয়। আকতার হোসেনের মতো কয়েক শত মৌসুমী ব্যবসায়ী সৈয়দপুরে রেললাইনসহ বিভিন্ন হাট-বাজারে পুরাতন শীতবস্ত্র বিক্রি করেন। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে বেশ বড় পাইকারি মোকাম গড়ে উঠেছে এ এলাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রংপুর অঞ্চলের কয়েকটি জেলায় শীতের তীব্রতা বেশি থাকে। ফলে গরম কাপড়ের চাহিদা বেশি। রংপুর বিভাগে সৈয়দপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় ব্যবসা চলে জমজমাট। জয়পুরহাট থেকে আসা সমশের আলী ও ঠাকুরগাঁওয়ের ওয়াহেদ আলী বলেন, এবার শীতবস্ত্রের দাম তেমন বাড়েনি। সৈয়দপুরে দাম কম। জ্যাকেট, মাফলার ও টুপি কিনে ট্রেনে এলাকায় নিয়ে যাব। ডিমলা বস্ত্রালয়ের মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শীতে বেচাকেনা বেশি হলেও বাকি দিতে হয়। দিন দিন ব্যবসা বড় হচ্ছে। শীত মৌসুমে অন্তত এক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। তবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা নেই। এ খাতের ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋণ না পাওয়ায় এনজিওর ঋণ নিয়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি। পাইকারি ব্যবসায়ী শের আলী বলেন, শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জিসহ নানান পোশাক সারা বছর বিক্রি হয়। বেশি বিক্রি হয় ১ নম্বর রেল গুমটির রেললাইনের পাশে। তবে এখানে ঝুঁকি ও উচ্ছেদ আতঙ্ক নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।