শরীয়তপুরজুড়ে ভ্যেকু দিয়ে ফসলী জমি থেকে মাটি কেটে মৎস্য ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এতে কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। জেলা সদরসহ ৬টি উপজেলায় প্রায় অর্ধশত ভেক্যু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে নেয়ায় একদিকে যেমন কৃষি জমি কমে যাচ্ছে, অন্যদিকে শত শত কৃষক বেকার হয়ে গেছেন। এছাড়া রাস্তার পাশে মাটি কেটে মৎস্য ঘের তৈরি করায় হুমকির মুখে পড়েছে বহু সড়ক।
জেলা প্রশাসনের রেভিনিউ ডেপুটি কলেক্টর অফিস সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার আটং গ্রামে ভেক্যু দিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার দায়ে স্থানীয় হৃদয় মোল্লা নামের একজনকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া সদর উপজেলার রুদ্রকর বিলে ভেক্যু দিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে মৎস্য ঘের তৈরি করার অভিযোগে ৪টি ভেক্যু আটক করে এর ৩টি বিকল করা হয়েছে এবং ১টি ভেক্যু তাদের অধীনে আটক করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আব্দুল্লাহ আল মামুন। তবে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, জেল-জরিমানার পরেও থামছে না ভেক্যু দিয়ে কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা।
বুধবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার বালারবাজার এলাকায় ৪টি ভেক্যু দিয়ে মাটি খনন করে মৎস্য ঘের তৈরি করা হচ্ছে। একই উপজেলার মহিষার, নারায়নপুর, দামগারিয়া, সখিপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিলে ভ্যেকু দিয়ে দেদার মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া, মাইলের পর মাইল ড্রেজার পাইপ সংযোগ দিয়ে কৃষি জমির মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে। ভেক্যু দিয়ে জমির টপ সয়েল ও ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ফসলি জমিগুলোকে ১০ থেকে ২০ ফুট গভীর গর্ত করা হচ্ছে। এতে আশ-পাশের ফসলী জমি ভেঙ্গে তৈরি হচ্ছে জলাশয়। ভেঙ্গে পড়ছে পাশের রাস্তা। বালারবাজার এলাকার কৃষক আলী আহাম্মদ বকাউল, ছমির উদ্দিন শেখ, রাজিব হোসেনসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, এভাবে ফসলী জমির মাটি বিক্রি হতে থাকলে ফসল উৎপাদনে হ্রাসসহ রাস্তার পাড় ভাঙ্গন ঠেকানো সম্ভব হবে না।
তাছাড়া, মাহেন্দ্রা ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে কৃষি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় নেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আর এতে কৃষি ফসলের উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। সখিপুরের কৃষক মোঃ নুরুল ইসলাম, আব্দুর রহমান, দ্বীন ইসলামসহ অনেকে জানান, আমাদের এই চক থেকে প্রতিনিয়তই মাটি কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। তৈরি করছেন মাছের ঘের। কিছুদনি আগে প্রশাসন পক্ষ থেকে নিষেধ করার পর কিছু দিন বন্ধ ছিল মাটি কাটা। কিন্তু এখন আবার পুনরায় সব কিছু মেনেজড করে চালু করেছে মাটি কেটে মৎস্য ঘের তৈরির উৎসব। তারা আরও বলেন, এলাকায় দেদারছে চলছে ড্রেজার, ভেক্যু ও মাটিবাহী মাহেন্দ্রা ও ট্রাক্টর। আর এতে রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর বৃষ্টি হলে এ ধুলাবালি থেকে সম্পূর্ণ পাকা রাস্তা কাদায় পরিণত হয়।
আর এতে করে আমাদের এখানে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের চলাচলে পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অবৈধ ভেকু ও ড্রেজার দিয়ে যারা কৃষি জমি ক্ষতি করে মাটি কেটে নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।