ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বিয়ের এক যুগ পরে তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে বিতাড়িত করলো স্বামী

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ১৫:৪৪, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বিয়ের এক যুগ পরে তিন সন্তানসহ স্ত্রীকে বিতাড়িত করলো স্বামী

তিন সন্তানসহ স্ত্রী সুলতানা সুরমা

বিয়ের এক যুগ পরে তিন সন্তানসহ স্ত্রী সুলতানা সুরমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই মেয়ে চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া মরিয়ম জান্নাতি আর প্রথম শ্রেনির জামিলা আক্তার ও কোলের অবুঝ ছেলে জুবায়েরকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন এই অসহায় নারী। দুই মেয়ের শিক্ষা জীবন চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। স্বামী বশির খানের পরকীয়ার শিকার হয়ে যৌতুকের দাবিতে করা অসহনীয় মারধর আর নির্যাতন সহ্য করেও সংসার আগলে থাকতে চেয়েছিল সুরমা। সবশেষ বেধড়ক মারধর করায় সুরমাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এই সুযোগে পরকীয়া প্রেমিকাকে বাড়িতে নিয়ে আসে বশির খান। চিকিৎসা শেষে নিজের ঘরে ফিরলে ঘরে তালা দিয়ে পাষন্ড বশির খান সুরমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। এখন সুরমা তিন সন্তান নিয়ে হলদিবাড়িয়া গ্রামে বাবা বাসার রাঢ়ীর সংসারে বোঝা হয়ে আছেন। এনিয়ে একাধিকবার সালিশ বৈঠক হলেও কোন সমাধান জোটেনি সুরমার। ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে। প্রতিকার মেলেনি। বাধ্য হয়ে সুরমা পটুয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে সম্প্রতি (২৬ নভেম্বর-২০২৪) একটি মামলা করেছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নের খাজুরা গ্রামের রত্তন খানের ছেলে বশির খানের সঙ্গে ২০১২ সালে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হয় সুলতানা সুরমা। সুখের সংসার গড়তে ২০১৯ সালে উপার্জনের তাগিদে বিদেশে পারি জমায় বশির খান। নয় মাস পরে বাড়িতে এসে মোবাইল যোগে স্বামীর অধিক সময় ফোনালাপের পাশাপাশি অস্বাভাবিক আচরণ আর পরকীয়ায় আসক্ত নিশ্চিত হয় স্ত্রী সুরমা। তার মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগে। সুরমা এর প্রতিবাদ করলে শুরু হয় শারীরিক মানসিক নির্যাতন। শ্বশুর-শাশুড়িকে বিষয়টি জানালে তারা সাধারণ অপরাধ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
সুরমার দাবি, প্রবাসে থাকাকালে পরকীয়ায় জড়িয়ে যায় স্বামী বশির খান। বাড়ি ফিরে নানা নাটক সৃষ্টি করে তিনি। ফের বিদেশ যাওয়ার নামে ২০২২ সাল থেকে বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য সুরমার ওপর বশির চাপ প্রয়োগ করে। টানা দুই বছর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সবশেষ দুই মাস আগে বেধড়ক মারধরের কারণে গুরুতর আহত অবস্থায় কলাপাড়া উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে তিন দিন চিকিৎসা নিতে হয় সুরমাকে। এই সুযোগে পরকীয়া প্রেমিকা শিরীনা আক্তারকে ঘরে তুলে নেয়। এরপর থেকে বাবার সংসারে বোঝা হয়ে সুরমা তিন সন্তান নিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েছেন। সন্তানদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বন্ধ হয়ে আছে লেখাপড়া।
নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান শহীদ মাতুব্বর জানান, সুরমা নামের মেয়েটার বিষয়ে আমিও মীমাংসার বৈঠকে ছিলাম। তাকে তালাকও দেয় নাই, আর কোনো খোঁজ-খবরও নেয় না। কি কারণে সুরমাকে মারধর করেছে, কেন রাখবে না, কী দোষ বশির ও তাদের বাড়ির পক্ষ থেকে কিছুই জানতে পারি নাই। শেষ পর্যন্ত তাকে আইনের সাহায্য চাওয়ার জন্য বলেছি।
অপরদিকে সুরমার বিরুদ্ধে চুরির ঘটনা উল্লেখ করে মহিপুর থানায় বশির খান একটি অভিযোগ করেন। এর সত্যতা যাচাই করতে মহিপুর থানার এএসআই ইউনুস মোল্লাকে তদন্তের দায়িত্ব ভার অর্পন করে মহিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক সত্যতা উদ্ঘাটন করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে বশির খানের আবেদনের কোন সত্যতা পায়নি পুলিশ। সুরমা বর্তমানে তার আইনগত সহায়তাসহ সকল ধরনের সহায়তার কথা বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

জাফরান

×