কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থােপেটিক, সার্জারী, কার্ডিও, চক্ষু বিশেষজ্ঞসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। প্রয়ােজনীয় জনবল ও উপকরণ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। এছাড়া স্বাস্থ্য সহকারীর ২২টি পদ দীর্ঘদিন শূন্যসহ মালী ও ড্রাইভার না থাকায় এ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাচ্ছে না জনগণ। কমপ্লেক্সের ২শ'৮ জন কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে ৬৬টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ডাক্তার সংকটে প্রতিদিন ৫শ' থেকে ৬‘শ রােগীর চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় ডাক্তার ও প্রয়ােজনীয় জনবল নিরসনসহ দ্রুত ডিজিটাল এক্সরে মেশিন বরাদ্ধের দাবি উপজলাবাসীর।
কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যশার-সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত হওয়ায় আশপাশের উপজেলার রােগীরা এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শর্যায় উনিত হলেও মূলত ৩১ শর্যার জনবল দিয়ে চলছে এর কার্যক্রম। কমপ্লেক্সে একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে। জুনিয়র কনসালটেন্টের (সার্জারী), (অর্থাে), (কার্ডিও), (চক্ষু), (চর্ম ও যৌন) পদসহ ডাক্তাদের ২১ পদের মধ্যে ৯টিই শূন্য রয়েছে। নেই নার্সিং সুপারভাইজার, প্রধান সহকারী কাম হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিকের ৩টি পদের ৩টিই শূন্য, মেডিকেল টেকনােলজিস্ট (ফিজিও), ষ্টােরকিপার, সহকারী নার্স, কার্ডিওগ্রাফার, কোম্পাউন্ডার, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ৩৯টা পদের মধ্যে ২২টিই শূন্য। দীর্ঘদিন গাড়ী চালক ও জুনিয়র ম্যাকানিকের পদ শূন্য থাকায় রােগীরা অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এছাড়া উন্নয়ন খাতভূক্ত কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রােভাইডারের ২৯টি পদের মধ্যে দুটি পদ শূন্য। ৩য় শ্রেণীর সর্বমােট ৭৮টি পদের মধ্যে ৩৬টি পদ শূন্য। এছাড়া ৪র্থ শ্রেণীর নিরাপত্তা কর্মী, এমএলএসএস, মালী, ওয়ার্ড বয়, কুক, আয়া, ঝাড়ুদারসহ ২২ পদের ১২টি শূন্য। ডিজিটাল এক্সরে মেশিন না থাকায় এখন আর কােনাে রােগী হাসপাতালের অ্যানালগ এক্সরে মশিনে এক্সরে করতে আসে না।
উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে চলতি মাস পর্যন্ত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন করা হয় ১শ'১৩ জন প্রসুতিকে। শুধুমাত্র নবরম্বরে ইনডােরে ১ হাজার ২৬ জন ও আউটডােরে ১১ হাজার ৫শ'২৫ জন রােগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। একই সময় কুকুরের কামড়ে আহত ১ হাজার ৭শ'৩৪ জন, কুষ্ঠ রােগী ৫ জন ও যক্ষা রােগী ৩শ'৩৭ জনকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। এছাড়া জরায়ুমুখে ক্যানসার প্রতিরাধে কিশােরীদের হিউম্যান পপিলামা ভাইরাস (এইচপিভি) টিকা দেয়া হয়েছে ১০ হাজার ২শ'৭৪ জনকে।
কেশবপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শর্যার হলেও এখানে সব সময় রােগী বেশি থাকায় জায়গার অভাবে অধিকাংশ রােগীদের মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হয়। বর্তমানে নানাবিধ সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে সেবা নিতে আসা কলারােয়ার উপজেলার দেয়াড়া গ্রামের আজিজুল গাজী জানান, সকাল ১০টায় ডাক্তার দেখাতে এসে দুপুর সাড়ে ১২টায় ডাক্তার দেখাতে হয়েছে। ডাক্তার রক্তের পরীক্ষা দিয়েছেন তবে নার্স দেখে বলেন, এই পরীক্ষা এখানে হয় না। যে পরীক্ষা আমি হাসপাতালে দেড় থেকে দুইশ টাকায় করাতে পারতাম সেটা আমাকে বাইরে থেকে ৮শ' টাকায় করাতে হয়েছে। মনিরামপুরের পারখাজুরা গ্রামের ফরিদ আহমেদ জানান, এখানে কােনা চিকিৎসা সেবা নেই বললেই চলে। সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা মারামারিতে সামান্য আহত হয়ে হাসপাতালে আসলেই তারা রােগীকে জেলা সদর বা খুলনায় রেফার করে দেয়। ক্লিনিকের দালাল ও বাইরের এ্যামবুলেন্স ড্রাইভারদের দখলে থাকে হাসপাতাল। কোম্পানীর লোকের জন্য ডাক্তারের রুমে রোগিরা যেতে পারে না।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যে কারণ আমরা প্রয়ােজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছি। হাসপাতালে যে পরিমান রােগীর চাপ তাতে এখানে ৫০ থেকে ১০০ বেডে উন্নীত করা প্রয়ােজন। পার্শ্ববর্তী মনিরামপুর ও কলারােয়া উপজেলার রােগীরাও এখানে সেবা নিতে আসেন। চিকিৎসক নিয়ােগ না দেয়া পর্যন্ত এ সংকট কমবে না। এ বিষয়ে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়া হয়েছে কর্মকর্তা জানান।
জাফরান