নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি
সীমান্তে যেকোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি কিংবা অপতৎপরতা রোধে বিজিবি সম্পূর্ণ প্রস্তুত ও সতর্ক রয়েছে। মঙ্গলবার বিজিবি সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের পর আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে বিজেপি সমর্থকদের লংমার্চ কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় আখাউড়া সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ছাড়া আখাউড়া স্থলবন্দরেও বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সোমবার থেকে আগরতলায় কোনো বাংলাদেশী যাত্রীকে হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা।
জানা গেছে, গত সোমবার আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। এর পর মঙ্গলবার দুপুরে আখাউড়া সীমান্ত অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিজেপি সমর্থকরা। এর প্রেক্ষিতে দুইদেশের সীমান্তে উত্তেজনা বিরাজ করায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আখাউড়া স্থলবন্দরে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
তবে সোমবার থেকে আগরতলায় হোটেল ভাড়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশী যাত্রীরা। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা প্রয়োজনীয় কাজ না সেরেই দেশে ফিরে আসছেন। এ ছাড়া বিক্ষোভের কারণে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ভারতে রপ্তানিকৃত পণ্য আগরতলা স্থলবন্দর থেকে আমদানিকারকরা খালাস করতে পারেনি।
ভারত থেকে আসা কয়েকজন বাংলাদেশী যাত্রী জানান, যারা আগরতলায় গিয়েছেন তাদের শহরের ভেতরে কোনো হোটেল ভাড়া দেওয়া হয়নি। অনেকেই বাধ্য হয়ে শহরের বাইরে গিয়ে হোটেলে থেকেছেন। এ ছাড়া মার্কেটে কেনাকাটা করতে গেলেও বাংলাদেশী পরিচয় পেলে কিছু বিক্রি করছে না। এর ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশটিতে ভ্রমণরত বাংলাদেশীরা। এ ছাড়া আগরতলা ইমিগ্রেশনেও বাংলাদেশী যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।
আখাউড়া ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খাইরুল আলম জানান, ভারতফেরত যাত্রীরা নানা অভিযোগ জানাচ্ছেন। তাদের হোটেল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে না এবং ইমিগ্রেশনেও হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কারণে মঙ্গলবার যাত্রী পারাপার সীমিত ছিল। বিষয়গুলো আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
বিজিবির ৬০ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এ. এম. জাবের বিন জব্বার জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সীমান্তের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে স্থলবন্দরে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সোমবার ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকায় আগুন দেওয়ার ঘটনায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত ও একজনকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, হামলায় জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে সাতজনকে।
পশ্চিম ত্রিপুরা পুলিশের এসপি কিরণ কুমার জানিয়েছেন, দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে পুলিশের তিনজন উপ-পরিদর্শককে (সাব-ইন্সপেক্টর) সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া, একজন ডেপুটি এসপিকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এসপি কিরণ কুমার আরও জানান, এ ঘটনায় আগরতলার নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঘটনার পর আগরতলার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে সিআরপিএফ ও ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস (টিএসআর) বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।