গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসন
হটাৎ করে উধাও হয়ে গেছেন পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। গত পাঁচদিনেও তার খোঁজ মেলেনি। এ সময়ে বন্ধ রয়েছে তার ব্যক্তিগত ও অফিসিয়িাল দুটি মোবাইল ফোন। বারবার ফোন করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন পটুয়াখালীর সিভিল সার্জনও।
তিনি বলেন, গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মেজবাহউদ্দিন কোনো ধরণের ছুটির আবেদন ছাড়াই কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি পরিচালককে জানানো হয়েছে। পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগ দেয়ার জন্য পটুয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার পদ থেকে অবমুক্ত হয়ে ডা. মো. ইমাম হোসেন পদায়নের জন্য অপেক্ষমান রয়েছেন। দায়িত্বভার বুঝিয়ে না দেয়ায় তিনি ওই পদে যোগদান ও দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
এদিকে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা না থাকায় উপজেলার স্বাস্থ্য প্রশাসন প্রায় ভেঙ্গে পড়েছে। স্বাস্থ্যসেবাও বিঘিœত হচ্ছে। রোগীরা পাচ্ছেন না কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের নজরে রয়েছে বলেও জানা গেছে।
কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে পরিচালক (প্রশাসন) ডা. এবিএম আবু হানিফ গত ২৭ নভেম্বর এক পত্রে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মেজবাহউদ্দিনকে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করেন। একইদিন আরেক পত্রে একই কর্মকর্তা পটুয়াখালী সদর হাসপাতালের সহকারী সার্জন/সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. ইমাম হোসেনকে গলাচিপা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে বদলি করেন।
কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ডা. মো. ইমাম হোসেন পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল থেকে অবমুক্ত হন এবং ২৯ নভেম্বর নতুন পদে যোগদানের জন্য গলাচিপা আসেন। কিন্তু ডা. মো. মেজবাহউদ্দিন ডা. মো. ইমাম হোসেনকে দায়িত্বভার হস্তান্তর না করে ওইদিন হটাৎ করে উধাও হয়ে যান। এতে নতুন পদে যোগ দিতে এসে বিপাকে পড়েন ডা. মো. ইমাম হোসেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, ডা. মো. মেজবাহউদ্দিন ২০১৭ সালে প্রথমে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দেন। ২০২৩ সালে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত অবস্থায় বর্তমান পদে পদোন্নতি পান। এক নাগাড়ে প্রায় ৮ বছর একই এলাকায় কর্মরত থাকায় তিনি বিভিন্ন মহলে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই প্রভাব খাটিয়েই তিনি বদলি ঠেকাতে মাঠে নেমেছেন। যে কারণে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো ধরণের অনুমতি কিংবা ছুটি না নিয়ে তিনি তব্দিরে ব্যস্ত রয়েছেন। এমনকি তিনি সরকারি এবং ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন দুটিও বন্ধ রেখেছেন। ফোনে বারবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ছুটি কিংবা অনুমতি না নিয়ে কর্মস্থল থেকে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি পটুয়াখালীর সিভিল সার্জন ডা. এস এম কবির হাসানও স্বীকার করেছেন।
মোবাইলফোনে তিনি বলেন, আমি ডা. মো. মেজবাহউদ্দিনের বিষয়ে কিছুই জানি না। আমার কাছ থেকে তিনি কোনো ধরণের ছুটি নেননি। অনুমতি ব্যতিত কর্মস্থল ত্যাগের বিষয়টি পরিচালককে অবহিত করেছি এবং পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
এদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনুপস্থিতি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসন এবং সেবা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। গত পাঁচদিন ধরে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের ইচ্ছে মতো কর্মস্থলে আসেন আবার চলে যান। জবাবদিহিতার ন্যূনতম কোনো ব্যবস্থা নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, পরিবারে প্রধান না থাকলে যেমন সবকিছু অচল হয়ে পড়ে। গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একই দশায় পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে রোগীদের অবর্ণনীয় র্দুদশার চিত্র। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেশ কয়েকজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি থাকলেও তারা পাচ্ছেন না সেবা। আতংকে কাটছে তাদের সময়। জরুরি বিভাগে গায়ে জ্বর নিয়ে পানপট্টি গ্রাম থেকে ১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে আসা নাছিরউদ্দিন (৫২) বলেন, দুই ঘন্টা ধইরা বইয়া রইছি। ডাক্তারের দ্যাহা নাই। ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি সাড়ে আট মাসের বাচ্চা নিয়ে বাবা নাঈমুল ইসলাম বলেন, গত পাঁচদিনে মাত্র দুইবার ডাক্তারের দেখা পেয়েছি। ৫০ শয্যার গলাচিপা হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৮০-৯০ জন রোগী ভর্তি থাকেন এবং আইটডোরে তিন থেকে চারশ’ রোগী সেবা নিতে আসেন।
তাদের অনেকেই জানিয়েছেন কর্মকর্তার অনুপস্থিতে সেবা বঞ্চনার অভিযোগ।
এসব বিষয়ে সদ্য পদায়ন পাওয়া ডা. মো. ইমাম হোসেন বলেন, আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে পাইনি। তাই ইচ্ছে থাকলেও কিছু করতে পারছি না। এভাবে কাউকে কিছু না বলে ডা. মেজবাহউদ্দিনের উধাও হয়ে যাওয়াটা ঠিক হয়নি বলেও মনে করেন তিনি।
ইসরাত