রাজধানীর রমনা পার্কে ফুটেছে অনিন্দ্য সুন্দর বকফুল
বক দেখেছেন নিশ্চয়। বক, মানে বকপাখি। খুব পরিচিত এই পাখির নামে আছে একটি ফুলও। নাম বকফুল। অত্যন্ত প্রাচীন ফুল আজও একইভাবে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। ‘প্রাচীন’ এই জন্য বলছি যে, ফুলটির উল্লেখ পাওয়া যায় মধ্যযুগের সর্বশেষ কবি ভারতচন্দ্রের লেখায়। আরও কয়েকটি ফুলের সঙ্গে এই ফুলের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন : ‘অশোক কিংশুক মধুটগর/চম্পক পুন্নাগ নাগকেশর/গন্ধরাজ যুতি ঝাটি মনোহর/বাসক বক শেফালিকা।’
বকফুলের আরেক নাম বাসনা। বাসনা কেন, কে বলবে! তবে সৌন্দর্যের কারণে ফুলটি দেখার বাসনা যে কারও হতে পারে।
এই গাছের আদি আবাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় উপদ্বীপ এবং বোর্নিও দ্বীপ অঞ্চল। বকফুলের লাথিন নাম গ্রান্ডিফ্লোরা, যার অর্থ বড় ফুল। গ্রামেই বেশি দেখা যায়। শহরে সে তুলনায় কম। তবে রাজধানী ঢাকায় কিছু গাছ সচেতনভাবে লাগানো হয়েছিল। এখন গাছগুলোতে চমৎকার ফুল ফুটে আছে। রমনা পার্কের কথাই সবার আগে বলতে হয়।
সবুজ উদ্যানে অসংখ্য গাছপালা। তবু চোখ এড়ায় না বকফুল। এই গাছের আলাদা কয়েকটি সারি আছে। অপেক্ষাকৃত ছোট গাছের যৌগিক পাতা। দেখতে অনেকটা তেঁতুল পাতার মতো। গাছে গাছে সাদা ফুল। হাল্কা বাতাসে এমনভাবে দুলছে যে, সফেদ বক বলেই মনে হয়।
যেন আরেকটু বাতাস পেলেই উড়ে দূরে চলে যাবে! ভোর বেলায় বিন্দু বিন্দু শিশির জমা হয় পাপড়িতে। সূর্যের কিরণ এসে সেখানে পড়তেই হিরার টুকরোর মতো চিকচিক করে ওঠে। অবশ্য রমনায় আপাতত সাদা ফুল দৃশ্যমান হলেও, বেশি আকর্ষণ করে লাল বকফুল। আকার আকৃতি অভিন্ন।
এর পরও লাল রঙের কারণে এটিকে অন্যরকম মনে হয়।
উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা অনুযায়ী, এটি ক্ষুদ্র পত্রমোচি বৃক্ষ। বকফুলের কোমল কলিগুলো বাঁকানো। মঞ্জরি স্পল্প পৌষ্পিক। দুই থেকে চারটি ফুল পাশাপাশি দৃশ্যমান হয়। পাঁচ পাপড়ির ফুল প্রজাপতিসম। কা- সরল, উন্নত, ম্লান বাদামি ও মসৃণ। যৌগিক পত্র দেখতে পালকের মতো।
বকফুল মোটামুটি সারা বছরই ফুটে। বেশি চোখে পড়ে বর্ষা এবং শরতে। তবে এত লম্বা সময় অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
এখনই আশপাশে তাকান। খোঁজ করুন। ঠিক পেয়ে যাবেন। শিশির ভেজা বকফুলের সৌন্দর্য নিশ্চিত মুগ্ধ করবে আপনাকে।