যশোর পৌরসভার আওতাধীন পানির পাম্প বা গভীর নলকূপে ও মিলছেনা পানি
যশোর পৌরসভার আওতাধীন পানির পাম্প বা গভীর নলকূপ রয়েছে ২৮টি। এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অন্তত ১০টি। এতে পানির সংকটে ভুগতে হয় সেসব ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। বাকি পাম্পগুলো সচল থাকলেও সেগুলোতেও পানি ওঠে আংশিক।
দীর্ঘ ১০ বছর ১০টি পানির পাম্প অকেজো হয়ে পড়ে থাকলেও সেগুলো সংস্কার বা পুনরায় স্থাপনের কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ বাসিন্দাদের কাছ থেকে পানির বিল বাবদ ২৭০ টাকা করে প্রতি মাসে নেওয়া হতো নিয়ম করেই। তারা সময়মতো পৌরকর দিলেও গত এক দশকে সুপেয় পানির সমস্যার স্থায়ী সমাধান দিতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কোনো কোনো এলাকায় একেবারেই পানির সরবরাহ নেই। আবার কয়েকটি এলাকায় পানির সরবরাহ থাকলেও তা খুব সীমিত পরিসরে। তা ছাড়া সাপ্লাই লাইনের পানি নোংরা, দুর্গন্ধযুক্ত বলেও অভিযোগ গ্রাহকদের।
যশোর পৌরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও পৌর নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, আমার বাসা পানির পাম্পের পাশে। অথচ আমার বাসায় সাপ্লাই পানির লাইনে ঠিকমতো পানি পাই না। দিনের অধিকাংশ সময় টিপটিপ করে পানি আসে। সামনে শুষ্ক মৌসুম আসছে, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। তিনি বলেন, বিগত দিনে যারা পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর ছিলেন তারা বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম করে গেছেন। এর মধ্যে পানি নিয়েও তারা দুর্নীতি করেছেন। পৌর এলাকার অধিকাংশ পানির পাম্প অকেজো। এগুলো দ্রুত সংস্কার বা সচল না করলে আমরা পৌর বাসিন্দারা সবাই একযোগে পৌরকর দেওয়া বন্ধ করে দেব।
চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা সিফাত রহমান বলেন, আমাদের এলাকার পানির পাম্পটি গত ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট। এটি চালু করতে কখনোই কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। এ এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে বাধ্যতামূলক পানির সংযোগ নিতে হয়েছে। এতে তাদের বছরের পর বছর পানির বিল দিয়ে যেতে হচ্ছে, কিন্তু পানি সরবরাহ পাওয়া যায় না। শুধু নামমাত্র পানির সংযোগ দেখিয়ে টাকা হাতিয়েছেন সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলররা। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বাবলু মোল্লা জানান, বাড়িতে পৌরসভার পানির সংযোগ নেওয়া আছে। প্রতি মাসে পানির বিল দিচ্ছি, প্রতি বছর পৌর কর দিচ্ছি। কিন্তু তারপরেও পৌরসভার বাসিন্দাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা সুপেয় পানির সংকট। সেই সমস্যা আজ পর্যন্ত সমাধান হলো না।
অভিযোগ উঠেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে যশোর পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলররা বিভিন্ন প্রকল্প দেখিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে কোনো কোনো এলাকায় একের অধিক পানির পাম্প স্থাপন করেছেন। এদিকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতেই নেই পানির পাম্প। থাকলেও তা অচল বা আংশিক সচল। অথচ কোনো কোনো ওয়ার্ডে তিনটি-চারটি করেও পানির পাম্প আছে। এসব পানির পাম্প ও নামমাত্র সংযোগ দিয়ে প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিগত ১০ বছরে যশোর পৌরসভার দায়িত্ব পালন করা সাবেক মেয়র ও কাউন্সিলররা। যশোর পৌরসভার দেওয়া তথ্যমতে, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুইটি এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডে চারটি পানির পাম্প আছে। যেগুলো এখন অচল। এ ছাড়া ১, ৮ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ১০টি পানির পাম্প বিগত ১০ বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি) বিএম কামাল আহমেদ বলেন, ১০টি পানির পাম্প বিগত ১০ বছর ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় সেসব এলাকার বাসিন্দারা পানি নিয়ে সংকট ও ভোগান্তিতে পড়েন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে মেরামত করা হয়েছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান মিলছে না। এক্ষেত্রে নতুন করে পানির পাম্প স্থাপন করা প্রয়োজন। পৌর এলাকার অকেজো ও মৃত পানির পাম্পগুলো নতুন করে প্রতিস্থাপন ও সংস্কারের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে নতুন একটি প্রকল্প এনে তা আগামী এক বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।