যেনতেনভাবে কাজ করায় ধসে পড়েছে গাইড ওয়াল
নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর ॥ জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরে খাল সংরক্ষণ কাজটি শেষ না করেই সাড়ে ৪ কোটি টাকা বিল উঠিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন ঠিকাদার ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির মোল্লা। চলতি বছরের মার্চ মাসে কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। যতটুকু কাজ করেছে তাও ভেঙে পড়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, খাল সংরক্ষণের আওতায় ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের ৩৮০ মিটার দীর্ঘ খালটি দুপাশ সংরক্ষণের জন্য ৫ কোটি ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এতে খালের দুপাশে ৩৮২টি পাইলিং করে গাইডওয়াল নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এই খালটি সংরক্ষণের জন্য দরপত্র আহ্বান করলে ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ওয়ার্ক ওয়ার্ডার পায় ঢাকার টেকবে ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই কাজটি করেন সখীপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, ভেদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্লা।
স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তফা, শাহীন মিয়া, রোমান সরদারসহ অনেকে জানিয়েছেন, খালের দুপাড় দখল করে গড়ে উঠেছে বড় বড় পাকা স্থাপনা। খালটি প্রায় ৭০ ফুট চওড়া থাকলেও খালের মাঝে ৫০ ফুট চওড়া রেখে দুপাড়ে যেনতেনভাবে গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে সঙ্কুচিত হয়ে গেছে খালটি। যেনতেনভাবে কাজ করায় ইতোমধ্যে গাইডওয়ালের কয়েকটি স্থানে ধসে পড়েছে। এছাড়া ৩৮২টি পাইলিং করার কথা থাকলেও নামমাত্র কিছু পাইলিং করে গাইডওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। এতে গাইডওয়াল টেকসই হবে না বলে স্থানীয় লোকজন মন্তব্য করেছেন।
ভেদরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, খাল খনন করে মাটি খালের বাইরে না ফেলে খালের মধ্যে ফালানোর কারণে খালে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খাল সংরক্ষণ হিতে-বিপরীত হয়েছে। ফলে সরকারি ৫ কোটি টাকা গচ্চা যাবে বলে ধারণা করেছেন স্থানীয়রা। কাজ সমাপ্তি করে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে হস্তান্তর করার কথা থাকলেও এখনো কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্ট অফিসে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বিল উঠিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন কাজের ঠিকাদার হুমায়ুন কবির মোল্লা।
আওয়ামী লীগ নেতা হুমায়ুন মোল্লা এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়ে থাকায় এবং তার মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, কাজ সমাপ্ত করে এখানো আমাদের নিকট হস্তান্তর করেনি। ঠিকাদার প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন- এ কথা স্বীকার করে নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, আমরা ঠিকাদারকে কাজ সমাপ্ত করার জন্য বার বার নোটিশ পাঠাচ্ছি। এখনো ৭০ লাখ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। তা ছাড়া ৫০ লাখ টাকা জামানত আছে আমাদের কাছে।