প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়াতে ১৯৭৫ সালে ভোলার লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘পূর্ব চরউমেদ আহম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসা’। ১৯৮৪ সালে এমপিওভুক্ত হয় এই মাদরাসাটি। প্রতিষ্ঠালগ্নে টিনশেড ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম চললেও ১৯৯৭ সালে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে একটি পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনটিতে অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান এবং অফিসের কার্যক্রম চলছে। তবে পাকা ভবন নির্মাণের ১০ বছর পর ওই ভবনটি ধীরে ধীরে জরাজীর্ণ হয়ে পড়তে শুরু করে।
এছাড়া পাকা ভবনটির পাশে একটি টিনশেড ভবনে চালানো হতো ইবতেদায়ী শাখার প্রথম থেকে পঞ্চম ও ৬ষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম। তবে গত ১০ বছর ধরে পাকা ভবনটিও একেবারেই জরাজীর্ণ হয়ে রয়েছে। বৃষ্টি হলে ছাদের ওপর থেকে পানি পড়ে ভেতরে। এজন্য পাকা ছাদের ওপর দেওয়া হয়েছে টিনের চাউনি। তবুও মাদরাসাটির জরাজীর্ণ ওই ভবনে চরম ভোগান্তি নিয়ে পাঠদান এবং অফিসের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
অপরদিকে পাকা ভবনের পাশে থাকা টিনশেড ভবনটি গত ৭ মাস আগে আকস্মিক ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এরপরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আরো বেড়ে যায়। ঝড়ে টিনশেড ভবনটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর জরাজীর্ণ পাকা ভবনের একটি ক্লাস রুমে ইবতেদায়ীর পাঁচটি শ্রেণি এবং অন্য দুইটি ক্লাস রুমে ৬ষ্ঠ থেকে শুরু করে দশম শ্রেণির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে চরমভাবে বিঘ্ন হচ্ছে পাঠদান কার্যক্রম। বর্তমানে মাদরাসাটিতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৮০ জন শিক্ষার্থী এবং ১৬ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। মাদরাসাটির জরাজীর্ণ ভবনে জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মচারীরা।
পূর্ব চরউমেদ আহম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমাদের মাদরাসার ভবনটিও জরাজীর্ণ। এছাড়া একটি টিনশেড ভবনে কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হতো। তবে গত কয়েক মাস আগে আকস্মিক এক ঝড়ে ওই টিনশেড ভবনটি তছনছ হয়ে যায়। যার জন্য বাধ্য হয়ে জরাজীর্ণ পাকা ভবনটির যেসব শ্রেণি কক্ষ রয়েছে সেখানেই একেকটি ক্লাস রুমে একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পাঠদান করতে গিয়ে আমাদের ভীষণ বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কারণ কয়েকটি শ্রেণির শিক্ষার্থী এক ক্লাস রুমে বসায় তারা সঠিকভাবে পড়া বুঝতে পারছে না। এর ফলে এই মাদরাসার স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এই প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষারগুণগত মান বৃদ্ধিসহ মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অধিক শ্রেণি কক্ষ সম্পূর্ণ একটি নতুন পাকা ভবন নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
ওই মাদরাসা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পরিস্থিতি এখন এমন; যেন মাদরাসায় আসার জন্য আসা! কারণ মাদরাসার একটি ক্লাস রুমের মধ্যে একাধিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বসে পড়ালেখা করছি। এতে করে আমাদের শিক্ষকরা কী পড়াচ্ছেন তা ঠিকমতো বুঝতে পারছি না। এর মূল কারণ এই মাদরাসায় শ্রেণি কক্ষ সংকট। তাই আমরা শিক্ষার্থীরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিপূর্ণ শ্রেণি কক্ষসহ এখানে একটি নতুন পাকা ভবন নির্মাণের দাবি করছি।
পূর্ব চরউমেদ আহম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার মাওলানা মো. অলি উল্যাহ জানান, নতুন ভবনের জন্য আরো আগেই আবেদন করে রাখা হয়েছে। তবে আবেদন যেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কেবল জমাই পড়ে রয়েছে, তা না হলে এতো দুর্ভোগ নিয়েও আমাদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিয়মিত মাদরাসা আসছেন এবং পাঠদান করাচ্ছেন। তবে নতুন ভবন নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো খুব শিগগিরই যেন একটি আধুনিক ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আমাদের মাদরাসার শ্রেণি কক্ষের সংকট দূরকরণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেন। তাহলেই আমাদের শিক্ষার্থীরা মাদরাসায় সুন্দরভাবে পড়ালেখা করতে পারবেন।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মদন মোহন মন্ডল বলেন, উপজেলার সকল ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করে ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। তবে পূর্ব চরউমেদ আহম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসার ভবনটি সত্যিই অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূর্ব চরউমেদ আহম্মাদিয়া দাখিল মাদরাসাটিতে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য আবারো তালিকা পাঠানো হবে। আশা করছি এরপর ওই মাদরাসায় সুন্দর একটি ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।